ব্রহ্মপুত্র রেলব্রিজসহ ৩টি ব্রিজই ঝুঁকিতে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে ময়মনসিংহের শত বছরের বেশি পুরনো ব্রহ্মপুত্র রেলসেতুসহ বেশ কয়েকটি রেলসেতু। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এ অঞ্চলের বড় ৩টি সেতুর বেশির ভাগ কাঠের স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে।

লাইনের বেশকিছু নাট-বোল্ট চুরি হয়ে গেছে এবং কিছু খসে পড়ায় সেতুগুলো এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সম্প্রতি সিলেটের কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর নড়ে-চড়ে বসেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সাব-ডিভিশনে ট্রেন চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে স্বীকার করেন বড় ৩টি সেতুর বেশকিছু স্লিপার ও নাট- বোল্ট নষ্ট হয়ে গেছে। সেতুগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের সূত্র বলছে, ১৮৮৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনটি উদ্বোধনের সময় ময়মনসিংহ সাব-ডিভিশনের আওতায় ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা, ভৈরব, মোহনগঞ্জ, জারিয়া-ঝাঞ্জাইল ও জামালপুরসহ ৫টি রেলপথ চালু করা হয়। ময়মনসিংহ-শ্রীপুর সেকশনে ৯২টি, ময়মনসিংহ-বিদ্যাগঞ্জ সেকশনে ৩২টি, ময়মনসিংহ-গৌরীপুর সেকশনে ২৭টি, গৌরীপুর-আঠারোবাড়ি সেকশনে ২৭টি, গৌরীপুর-মোহনগঞ্জ সেকশনে ৮২টি, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া সেকশনে ২৫টিসহ ২৮৫টি ছোট-বড় সেতু-কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ শহরঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর প্রায় ৯০০ মিটার ব্রহ্মপুত্র রেলসেতু, ময়মনসিংহ-ঢাকা রেলপথে গফরগাঁওয়ের মশাখালী-কাওরাইদ শিলা নদীর ওপর শীলা সেতু এবং ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রেলপথের ঠাকুরাকোনা কংস নদীর ওপর রেলসেতুটি সবচেয়ে বড়।

ব্রহ্মপুত্র রেলসেতুটি মুক্তিযুদ্ধের পর পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। এরপর আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। সেতুটির ৬৬২টি স্লিপারের মধ্যে বেশির ভাগই ভেঙে গেছে, খসে পড়েছে নাট-বোল্টগুলো। রাতের আঁধারে লাইনের বিভিন্ন ফিটিংস চুরিও হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে সেতুটি। এছাড়া সেতুটিতে নেই কোনো রেলিং। সর্বসাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকলেও শুরু থেকেই শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে সেতু দিয়ে। আকস্মিক ট্রেন চলে এলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। দেখার যেন কেউ নেই। পাশেই শম্ভুগঞ্জ স্টেশনের কাছে রয়েছে আরও একটি ছোট সেতু। ‘কোরেরপাড়’ নামক সেতুটি ’৮৮-র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে সেটি সংস্কার করা হয়। এদিকে কেওয়াটখালী ওভারব্রিজটিও ঝুঁকির মধ্যে। ওভারব্রিজটির বেশির ভাগই জরাজীর্ণ। নাট-বোল্টও খসে পড়েছে। এর আগে কোনোরকম জোরাতালি দিয়ে সংস্কার করা হয় এক দফা। ফলে এই দুটি সেতু ও একটি ওভারব্রিজ ব্যবহার করে প্রতিদিন চট্টগ্রাম, ভৈরব, মোহনগঞ্জ ও জারিয়া-ঝাঞ্জাইলগামী ৪টি আন্তঃনগরসহ বেশ কয়েকটি লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের ট্রেন যাত্রীরা।

কথা হয় ময়মনসিংহ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) সুকুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই সাব-ডিভিশনে ত্রুটিযুক্ত কোনো ব্রিজ-কালভার্ট নেই।

সব ব্রিজ-কালভার্ট ট্রেন চলাচলের উপযোগী। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি। কাঠের স্লিপার নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নাট-বোল্ট ও অন্য ফিটিংস সামগ্রী চুরি বা খসে পড়ার কথা স্বীকার করে সুকুমার বিশ্বাস বলেন, মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ব্রিজের বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে। রাতে নেশাখোররা নাট- বোল্টসহ মূল্যবান ফিটিংস নিয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই ট্রেন চলাচলের সময় ঘর্ষণে আগুন জ্বলে যায়। রেলওয়ের লোকজন দেখেও উদাসীন।

এছাড়া ময়মনসিংহ-ঢাকা রেলপথের শ্রীপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ সেকশনে ২৯টি সেতু-কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ও কাওরাইদের মাঝখানে শিলা নদীর ওপর কাওরাইদ সেতু (১২৭নং সেতু) এবং গফরগাঁও ও মশাখালী স্টেশনের মাঝখানে বাসুটিয়া সেতুটিও (১৪১নং সেতু) ঝুঁকিপূর্ণ। কাওরাইদ সেতুটি বছরচারেক এবং বাসুটিয়া সেতুটি ২০০৭ সালে সংস্কার করা হলেও এখনও সেতু দুটি ঝুঁকিতে।