ব্যাংকের তারল্য বাড়াতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ বিতরণ স্থগিত

করোনার কারণে ২০১৯ সালের ব্যাংকের মুনাফা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণ না করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলমান সংকটময় সময়ে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোকে মুনাফা বিতরণ না করে মূলধন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। তবে বিতরণ স্থগিত হলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর স্বার্থে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা যাবে। এ জন্য নতুন করে নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নগদ ও স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া যাবে। গতকাল এসংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থনীতির সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবেলা করে ব্যাংকগুলো যাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে অবদান রাখতে পারে এ জন্য মুনাফা বিতরণ না করে মূলধন শক্তিশালী করতে হবে। এতে ব্যাংকের তারল্য পর্যাপ্ত থাকবে। আবার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। এ জন্য নীতিমালা জারি করা হলো।

নীতিমালায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হিসেবে যেসব ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ ও অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর সুনির্দিষ্ট মূলধন রাখতে পারবে তাদের ক্ষেত্রে ডিভিডেন্ডের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রভিশন সংরক্ষণ ও অন্যান্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা ছাড় গ্রহণ করেছেন তাঁদের ক্ষেত্রে ওই ছাড় সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত হারে মূলধন উন্নীত হলে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে। যদিও যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি, তারা খেলাপি ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করলে তাদের মুনাফার পরিবর্তে লোকসান হওয়ার কথা। লোকসানি ব্যাংকে ডিভিডেন্ড দিতে পারে না। ডিভিডেন্ড ঘোষণা করার উদ্দেশ্যেই প্রভিশন সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ছাড় সুবিধা গ্রহণ করেছে ব্যাংক।

ডিভিডেন্ড নীতিমালায় বলা হয়েছে, ছাড় গ্রহণ ছাড়াই যেসব ব্যাংকের কনজারভেশন বাফারসহ মূলধন সাড়ে ১২ শতাংশ বা তার বেশি তারা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে। যেসব ব্যাংকের মূলধন ১১.২৫ শতাংশ থেকে ১২.২৫ শতাংশের মধ্যে তারা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। এর মধ্যে নগদ দিতে পারবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ। আর যেসব ব্যাংকের মূলধন ১১.২৫ শতাংশের কম তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ৫ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। তবে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলেও ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে তা বিতরণ করা যাবে না। আর যেসব ব্যাংকের মূলধন ন্যূনতম ১০ শতাংশ তারা ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। মূলধন ঘাটতি থাকলে কোনো ব্যাংক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তাদের ঘোষণা এই নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে তা স্থগিত করতে হবে।

বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি ন্যূনতম সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। এর বাইরে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার বা আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের আওতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ০.৬২৫, ২০১৭ সালে ১.২৫, ২০১৮ সালে ১.৮৭৫ ও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২.৫ শতাংশ হারে এই বাড়তি পুঁজি সংরক্ষণ করার নির্দেশনা ছিল। এভাবে ন্যূনতম মূলধন এবং সংস্থান বজায় রেখে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হারের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১০.৬২৫, ১১.২৫, ১১.৮৭৫ ও ১২.৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা ছিল। কোনো ব্যাংক যদি ন্যূনতম মূলধন বজায় রেখেও উপরিউক্ত হারে বাফার রাখতে না পারে, সেই ব্যাংক কোনো নগদ লভ্যাংশ কিংবা বোনাস দিতে পারবে না। তবে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিয়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ