ব্যবসায়ীদের ১২০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

 

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিক শাসন কখনোই কাম্য নয়। দেশের নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে অবৈধভাবে ডিজিএফআই এসব টাকা তুলে নেয়। তবে ডিজিএফআই আনুষ্ঠানিকভাবে আপিল বিভাগকে জানিয়েছে, কিছু সদস্য ব্যক্তিগতভাবে এসব কাজ করেছে। এই দায় ডিজিএফআইয়ের নয়।

এর আগে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা ফেরত দিতে ২০১০ ও ২০১১ সালে পৃথক নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স (টিএফআই) কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সেনা-সমর্থিত ১/১১-এর সরকার ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল জেমস ফিনলের কাছ থেকে আদায় করে ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ওই টাকা ১৬টি পে-অর্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কনসোলিটেড ফান্ডে প্রথম জমা দেওয়া হয়। এর পর ২২ এপ্রিল একই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে আরো ১২০ কোটি ২৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। একই প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে দেড় বছর ধরে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসাবে টাকা জমা হয়েছে।

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ছাড়াও ‘অজানা’ উল্লেখ করেও সেনা-সমর্থিত সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা চার দফায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে কয়েক দফায় বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়েছে ওই সময়। ২০০৭ সালের ২৮ মে থেকে ২০০৮ সালের ১১ জুন পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে ২৫৬ কোটি টাকা নেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ১৯ জুন থেকে একই বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পারভীন হক সিকদার বাধ্য হয়ে সিকদার গ্রুপের পরিচালক ও সদস্যদের পক্ষ থেকে নয়টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে জানা গেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের কাছ থেকে ৩০ কোটি, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের ২০ কোটি, কবির স্টিলের সাত কোটি, ব্যবসায়ী নূর আলীর ৪০ কোটি ৫০ লাখ, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ, সাগুফতা হাউজিংয়ের দুই কোটি ৫০ লাখ, হোসাফ গ্রুপের ১৫ কোটি, পারটেক্স গ্রুপের ১৫ কোটি, স্বদেশ প্রপার্টিজের নয় কোটি, ইসলাম গ্রুপের ৩৫ কোটি, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আট কোটি, ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের ১৭ কোটি, আবু সুফিয়ানের ১৪ কোটি, শওকত আলী চৌধুরীর ছয় কোটি, আশিয়ান সিটির এক কোটি, পিংক সিটির ছয় কোটি ৪১ লাখ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৯ কোটি ৪৫ লাখ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ১৫ কোটি, ওয়াকিল আহমেদের ১৬ কোটি, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ২০ কোটি ৪১ লাখ, এলিট পেইন্টের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি, কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের সাত কোটি, জনৈক ব্যক্তির চার কোটি ও ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর কাছ থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা নেওয়া হয়।

সূত্র: এনটিভি