‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে’ খুন করা হয় শাহীনকে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবহন মালিক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনকে (৫৫) কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাকে ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে’ খুন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৫-৭ জনের একদল দুর্বৃত্ত জনবহুল উপশহর বাজার এলাকায় তাকে কুপিয়ে ফেলে যায়। পথচারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে পরিবারের সদস্যদের ধারণা, বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের ভাই পরিবহন ব্যবসায়ী ফেরদৌস রহমান জানান, শাহীন মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তিনি এ গ্রুপের একটি পক্ষকে মামলাসহ আইনি সহযোগিতা করতেন। তাই অপরপক্ষ তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

কয়েক দিন ধরে ফোনে শাহীনকে হুমকিও দেয়া হচ্ছিল। তাদের বিশ্বাস, এর জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড। পাশাপাশি তারা স্নিগ্ধা আবাসিক প্রকল্পের একটি পুকুর কেনা নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে শাহীনের বিরোধের কথাও উল্লেখ করেন।

তারা শাহীনকে হত্যার সময় সঙ্গে থাকা নুনগোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিনকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন।

স্বজনদের কেউ কেউ বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামীতে অ্যাডভোকেট শাহীন সভাপতি পদে নির্বাচন করার কথা। এ কারণেও তিনি খুনের শিকার হতে পারেন।

নিহত শাহীনের ভাইয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, শাহীনের সঙ্গে তাদের শুধু ব্যবসায়িক নয়; পারিবারিক সম্পর্কও রয়েছে। তার বিশ্বাস তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।

এদিকে বাদ আসর ধরমপুর খেলার মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপি চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এ ছাড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তাদের আইনি সহায়তা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, অ্যাডভোকেট শাহীন বগুড়া সদরের ধরমপুর এলাকার আনিসুর রহমান তালুকদারের ছেলে।

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি পরিবহন ব্যবসা ও আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি প্রতি রাতে নিশিন্দারা উপশহর বাজারে নুনগোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিনসহ অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন।

রোববার রাত ১০টার আগে তিনি তার প্রাইভেটকার নিয়ে উপশহর বাজারে আসেন। গোলাম মোস্তফা আবু তাহের নামে এক ব্যবসায়ীর বিসমিল্লাহ চাল আড়ত থেকে চাল কেনেন।

চালগুলো প্রাইভেটকারে রেখে দোকানিকে জানান, তিনি মোবাইল ফোন রিচার্জ করবেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত ও দায়ের কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়।

ইব্রাহিম ও ডিউক নামে দুই পথচারী রক্তাক্ত শাহীনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তারা আশপাশের ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করলেও কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শাহীনের মরদেহ সোমবার দুপুরে ধরমপুর স্কুলপাড়ার বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় স্ত্রী আকতারা জাহান শিল্পী, ছেলে প্রকৌশলী রাফসান আলসাবা সিয়াম, আরেক ছেলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাফেয়ান আলসাবা সায়েম, মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুজানা মেহজাবিন ও স্বজনরা আহাজারি করতে থাকেন।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, তারা বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, নিহত শাহীনের সঙ্গে থাকা নুনগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিন ছুরিকাঘাত করার দৃশ্য দেখলেও তিনি কাউকে চিনতে পারেননি।

নিহত অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনের ভাই ফেরদৌস রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তার (শাহীন) স্ত্রী আকতারা জাহান শিল্পী সদর থানায় হত্যা মামলা করবেন।

সরকার দেশকে বিএনপিশূন্য করতে বেপরোয়া: ফখরুল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেন আরও তীব্র মাত্রা লাভ করেছে। সরকার দেশকে বিএনপিশূন্য করতে এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে।

বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং প্রতিবাদী মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত করে চারদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে। যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়।

মানুষের জানমালের নিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে অ্যাডভোকেট শাহীনকে কুপিয়ে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। একই সঙ্গে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।