বোরকা পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন সেই আফগান নারী গভর্নর!

আফগানিস্তানের চারকিন্ত জেলার গভর্নর ছিলেন সালিমা মাজারি। আশরাফ গনি সরকারের শাসনকালে আফগানিস্তানের যে তিন নারী গর্ভনর ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন সালিমা।

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— আফগানিস্তানের একের পর এক প্রদেশ যখন তালেবান বাহিনীর দখলে চলে যাচ্ছিল, তখন বলখ প্রদেশের রক্ষায় সালিমা হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। অস্ত্র হাতে তার ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।

বলখ প্রদেশ দখলের সময় দুপক্ষের তুমুল সংঘর্ষ হয়। কিন্তু তালেবানের সঙ্গে তারা পেরে উঠতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। বলখ প্রদেশের পতন হয়। একই সঙ্গে সালিমার চারকিন্ত জেলাও দখল করে নেন তালেবান যোদ্ধারা।

বলখের পতনের পর থেকে সালিমার খোঁজ মিলছিল না।

কেউ দাবি করছিলেন, সালিমা তালেবানের হাতে ধরা পড়েছেন। আবার কারও দাবি ছিল, তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাঝে বেশ কয়েক দিন চরম উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর অবশেষে খবর এলো— সালিমাকে আমেরিকার একটি অজ্ঞাত জায়গায় নিরাপদে রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম টাইমের দুই সাংবাদিকের সহায়তায় দেশ ছাড়তে পেরেছেন সালিমা। কিন্তু তার দেশত্যাগের বৃত্তান্ত অত্যন্ত রোমহর্ষক।

বলখ প্রদেশের পতনের পরই পরিস্থিতি বুঝে যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন সালিমা। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সালিমা রওনা দেন আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান সীমান্তের হয়রতনের দিকে। উজবেকিস্তান সালিমাকে আশ্রয় দিতে আপত্তি করে। পরে তিনি পরিবার নিয়ে কাবুল চলে আসেন।

তালেবানের নজর এড়াতে বোরকা পরতে শুরু করেন সালিমা। বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই গাড়ি নিয়ে কাবুল আসেন তিনি। পথে বারবার চেক পোস্টে গাড়ি আটকে তল্লাশি হলেও, তাকে চিনতে পারেননি কেউ।

কাবুলের অজ্ঞাত জায়গায় এসে সালিমা যোগাযোগ করেন বন্ধুদের সঙ্গে। সেই সময় আমেরিকার টাইম পত্রিকার দুই সাংবাদিকের সঙ্গেও যোগাযোগ হয় সালিমার। তারা সালিমাকে দেশ থেকে বের করে নিতে পদক্ষেপ নেন।

২৩ আগস্ট একটি অচেনা নম্বর থেকে বার্তা পান সালিমা। সেখানে বলা হয়, আমেরিকান রেসকিউ অপারেশন সেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সেই নম্বরে নিজের ও পরিবারের সব তথ্য দেন সালিমা। এমনকি নিজের লোকেশনসহ ছবিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর সন্দেহ হয়, আমেরিকার উদ্ধারকারী দল কেন দাড়ি ভাষায় বার্তা পাঠাবে? মূলত পাক সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানে প্রচলিত এই ভাষা। তা হলে কি আমেরিকার উদ্ধারকারী দলের ভেক ধরে সালিমার সব তথ্য হাতিয়ে নিল অন্য কেউ?

পরিকল্পনা ছিল ২৪ আগস্ট একটি হেলিকপ্টারে প্রথমে সালিমা ও তার পরিবারকে গোপন আস্তানা থেকে উদ্ধার করে কাবুল বিমানবন্দরে আনা হবে। তার পর আমেরিকার উদ্ধারকারী বিমানে তুলে দেওয়া হবে তাদের। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে কোনো বার্তা না পেয়ে সালিমা পরিবার নিয়ে হাঁটা দেন কাবুল বিমানবন্দরের দিকে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

শেষ পর্যন্ত পায়ে হেঁটেই বিমানবন্দরে পৌঁছান সালিমা। ২৫ আগস্ট সালিমার পরিবারকে নিয়ে আকাশে ওড়ে আমেরিকার উদ্ধারকারী বিমান। তালেবানের কবল থেকে অবশেষে মুক্তি পেলেন আফগানিস্তানের এ মহিলা গভর্নর।

হাজারা সম্প্রদায়ের সালিমা ও তার পরিবারকে প্রথমে কাতার এবং তার পর আমেরিকার একটি অজানা জায়গায় রাখা হয়েছে। তিনি নিরাপদে রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর