বোনাস পেলেও বেতন পাচ্ছেন না ১৫ শতাংশ পোশাককর্মী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এবারের ঈদে দেশের তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় সব শ্রমিক বোনাস পেলেও বেতন পাচ্ছেন না প্রায় ১৫ শতাংশ শ্রমিক। যদিও অধিকাংশ কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের সাধ্য অনুযায়ী বোনাস দিয়েছেন। তবে, অনেকেই বোনাস হিসেবে শ্রমিকদের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা দিতে পারেননি। কেউ হয়তো মূল বেতনের ৭০ শতাংশ দিয়েছেন, কেউ হয়তো ৮০ শতাংশ দিয়েছেন।

আগামীকাল সোমবার ( ৩ জুন) দেশের সব কারখানার মালিক তাদের শ্রমিকদের সদ্যসমাপ্ত মে মাসের বেতন দিয়ে দেবেন। বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান এই তথ্য জানান।

এদিকে, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, বিজিএমইএ-ভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে  ৯১৬টিকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের বেতন-ভাতা ও বোনাসের ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জোনে অবস্থিত বিজিএমইএ-এর ১৫টি দল ওই ৯১৬টি কারখানা পরিদর্শন করে। শিল্প পুলিশ (আইপি), ডিজিএফআই, ডিএমপি ও ফেডারেশনের কাছে থেকে যে তালিকা পাওয়া গেছে, সেই তালিকার সঙ্গে বিজিএমইএ-এর পর্যবেক্ষণের মিল রয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে বিজিএমইএ-এর ৬০০টি কারখানা রয়েছে, যেখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, গত দেড় মাসে এগুলোর মধ্যে ৬৫টি কারখানার সংকট নিরসন করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৮টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিজিএমইএ-ভুক্ত সব কারখানাই বোনাস দিয়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ কারখানা মে মাসের বেতনও দিয়েছে, আর ১৫০টি কারখানা সোমবার (৩ জুন) বেতন দিয়ে দেবে। কারণ, ঈদের আগে ৩ জুন শেষ কর্মদিবস। বিজিএমইএ-এর হিসাব অনুযায়ীই ৪৫০ কারখানা ঈদের আগে তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবে না।

শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে কারখানায় যোগ দেওয়া নতুন শ্রমিক—যাদের চাকরির বয়স একবছর হয়নি, এমন অন্তত পাঁচ শতাংশ শ্রমিক ঈদ বোনাস পাবেন না। দেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত মোট শ্রমিকের সংখ্যা যদি হয় ৪০ লাখ, তাহলে এবারের ঈদে প্রায় দুই লাখ পোশাককর্মী ঈদ বোনাস পাবেন না। এই দুই লাখ শ্রমিককে বোনাস ছাড়াই পরিবার পরিজন নিয়ে এবারের ঈদ উদযাপন করতে হবে। একইসঙ্গে দেশের মোট কারখানার প্রায় ১৫ শতাংশ কারখানার শ্রমিকরা মে মাসের পুরো বেতন পাবেন না। বাকি কারখানার শ্রমিকদের বেশিরভাগই মে মাসের পুরো বেতনের পরিবর্তে ২০ দিনের বেতন এবং বোনাসেরও আংশিক পাবেন। সোমবার (৩ জুন) দেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত সময়ের শেষ দিন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মে  (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কোর কমিটির ৪২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের গার্মেন্টসসহ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি শ্রমিকদের ঈদের বোনাস (উৎসব ভাতা) মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে এবং মে মাসের পুরো বেতন ২ জুনের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকসহ গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, সরকারের নির্দেশ থাকার পরেও এখনপর্যন্ত দেশের শতভাগ তৈরি পোশাক কারখানা মালিকরা তাদের শ্রমিকদের মে মাসের পুরো বেতন দেননি। কেউ দিয়েছেন ২০ দিনের, কেউ দিয়েছেন ১৫ দিনের বেতন। একইসঙ্গে মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসব ভাতা দেওয়ার আইন থাকলেও কেউ দিয়েছেন ৫০ শতাংশ, আবার কেউ দিয়েছেন ৭০ বা ৮০ শতাংশ। কারণ জানতে চাইলে সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার অজুহাত দেখিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘মালিকদের সক্ষমতা অনুযায়ী বেতন বোনাস দিয়েছেন। এখনো হয়তো সব মালিক পারবেন না। তবে, অধিকাংশ মালিকই পুরোটা না পারলেও আংশিক বেতন-বোনাস দিয়েছেন। কারখানার মোট শ্রমিকের মধ্যে কিছু নতুন শ্রমিক রয়েছেন, যাদের চাকরির বয়স একবছর পুরো হয়নি। এমন শ্রমিকরা মে মাসের বেতন পেলেও হয়তো বোনাস পাবেন না।’

সিরাজুল ইসলাম রনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের শ্রমিকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বোনাস না পাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা মোট শ্রমিকের ৫ শতাংশ হবে। সেই হিসাবে এমন শ্রমিকের সংখ্যা হতে পারে প্রায় দুই লাখ, যদি এই সেক্টরে মোট শ্রমিকের পরিমাণ হয় ৪০ লাখ। এখনও অনেক কারখানা রয়েছে, যেসব কারখানার শ্রমিকদের এখন পর্যন্ত বোনাস-বেতন কিছুই দেয়নি। সামনে আরও একদিন সময় রয়ে গেছে। সোমবার (৩ জুন) কিছু কারখানায় বেতন-বোনাস দেবে বলে জেনেছি।’

জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি লীমা ফেরদৌস বলেন, ‘বড় কারখানার মালিকরা তাদের শ্রমিকদের পাওনা দিয়েছেন। সমস্যা হচ্ছে ছোট কারখানার মালিকদের নিয়ে। তারা অনেকেই আংশিক বোনাস দিলেও এখনপর্যন্ত মে মাসের বেতন দেননি। আশা করছি, সোমবার তা দিয়ে দেবেন। যদি না দেন, তাহলে তা হবে দুঃখজনক  ঘটনা। যা আমরা চাই না।’

এদিকে, মক্কায় অবস্থানরত বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রত্যেক কারখানার মালিকই তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সাধ্য অনুযায়ী দিয়ে দেবেন। সরকারি সিদ্ধান্তের কোনও বরখেলাপ হবে না। তবে, মালিকদের সক্ষমতার বিষয়টিও দেখতে হবে। গত মে মাসে এপ্রিল মাসের বেতন দিতে হয়েছে। এই মে মাসেই দিতে হচ্ছে ঈদ বোনাস। এখন মে মাসের বেতনের টাকা জুন মাসের ২ তারিখের মধ্যে দিতে হলে সে টাকাও জোগাড় করতে হচ্ছে বলতে গেলে মে মাসেই। একটি মাসে তিন তিনটি বেতন-বোনাসের টাকা জোগাড় করা আসলেই কঠিন।’

এ দিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘বিজিএমইএ-ভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে আমরা ৯১৬টি কারখানা শনাক্ত করেছি, যাদের বেতন-ভাতা ও বোনাসের ইস্যু বিশেষ মনোযোগের দাবিদার। ভিন্ন ভিন্ন জোনে বিজিএমইএ-এর ১৫টি দল ওই ৯১৬টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। আইপি, ডিজিএফআই, ডিএমপি ও ফেডারেশনের কাছে থেকে আমরা যে তালিকা পেয়েছি, তার সঙ্গে আমাদের পর্যবেক্ষণ মিলে গেছে। চূড়ান্তভাবে ৬০০টি কারখানা শনাক্ত করেছি, যেখানে সত্যিই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সুতরাং আমরা বিশেষভাবে সেই কারখানাগুলোকে নিয়ে কাজ করেছি। গত দেড় মাসে এগুলোর মধ্যে ৬৫টি  কারখানার সংকট নিরসন করেছি। ২৮টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজিএমইএ-ভুক্ত সব কারখানাই বোনাস দিয়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ কারখানা মে মাসের বেতনও দিয়েছে, আর ১৫০টি কারখানা আগামীকাল বেতন দিয়ে দেবে।’ কারণ হিসেবে ৩ জুন শেষ কর্মদিবসের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি।