শুক্রবার , ৫ এপ্রিল ২০১৯ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বৈশাখ মাতাবে ‘শখের হাঁড়ি’

Paris
এপ্রিল ৫, ২০১৯ ৮:২০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পহেলা বৈশাখের দিন দশেক বাকি। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে মৃতশিল্পীদের। বৈশাখী উৎসবের প্রস্তুতিকে ঘিরে ব্যস্ততায় দিন কাটছে তাদের। তাই রাত-দিন সমান তালে বৈশাখী উৎসবের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে ব্যস্ত পরিবারের সদস্যরাও। রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বসন্তপুর এলাকার ‘ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ি’ তৈরির কারিগরের বাড়িতে এমন চিত্র দেখা যায়। বাড়ির সদস্যদের যেনো দম ফেলার সময়টুকুও নেই।

বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টা হবে। বাড়ির সামনের সুশান্তকুমার পাল তৈরি করছেন ছোট ছোট হাড়ি। পাশেই কাজ করছে সঞ্জয়কুমার পাল। তাকে সাহায্য করছেন বাড়ির সদস্যরা। তিনি ছোট ছোট হাড়ি তৈরি করছেন। বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ব্যস্ততার ছবি। পরিবারের একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। উদ্দেশ্যে পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। কেউ প্রস্তুত করছে মাটি, কেউ তৈরি করছে বিভিন্ন জিনিসপত্র। আবার কেউ বা রঙের তুলির শেষ আঁচড় কাটছেন নানা ধরনের সখের হাঁড়িতে।
রঙের তুলির আঁচড়ে পরিবারের ছোট সদস্যরাই অংশ নিচ্ছে। ১০ বছরের সঞ্জিতারানী পাল। সেই সখের হাড়িতে বিভিন্ন আলপনা আঁকছে নিজের ইচ্ছেমত। আবার বাবা-মাদের দেখানো নকশায় তুলির আঁচড় কাটছে সে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুরো রাজশাহী জুড়ে শুধু এই উপজেলায় বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। আর নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মেলায়। মেলাগুলোতে বেশ কদর রয়েছে রাজশাহীর ‘সখের হাড়ি’র তৈরি জিনিসপত্রের। কিন্তু মূল্যায়ন নেই নিজ শহর রাজশাহীতে। আমন্ত্রণ জোটেনে রাজশাহীর কোনো মেলায়।

কারুশিল্পী সুশান্তকুমার পাল। মৃতপ্রায় এ মৃৎশিল্প টিকিয়ে আজও জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মৃৎশিল্প আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন তিনি। শুধু সুশান্ত পালই নয়, সঙ্গে স্ত্রী মমতা রানী পাল, দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল, এক মেয়ে সুচিত্রা রানী পাল এবং দুই ছেলের স্ত্রী মুক্তি রানী পাল ও করুণা রানী পাল ‘সখের হাড়ি’র কারিগর। তারা সবাই এখন কারুশিল্পী। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন তারাও।

বর্তমানের আধুনিক প্লাস্টিক, সিরামিক, সিন্থেটিক, ধাতব, কাঁচ এবং মেলামাইন সামগ্রীর দৌর্দণ্ড প্রভাবে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা ফুরিয়েছে অনেক আগেই। তবুও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন সুশান্ত পাল ও তার পরিবার।

সুশান্ত পালের বাড়িতে পা দিতেই উঠোন জুড়ে দেখা গেলো- কোথাও হাড়ি, কোথাও হাতি-ঘোড়া, কোথাও পঁঞ্চসাধিসহ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মাটির তৈরি উপকরণের নানা সমারোহ। সবগুলোর সামগ্রিক অর্থে নাম দেয়া হয়েছে ‘সখের হাঁড়ি’। বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে, ছোট বড় প্রায় ১০ রকমের সখের হাঁড়ি। এছাড়াও ট্যাপা পুতুল, হাতি-ঘোড়া, পঁঞ্চসাধি, সরা, পাখি ইত্যাদি। আবার সেগুলো দেয়া হয়েছে রোদে শুকাতে। শুকানোগুলোতে চলছে রং-তুলির আঁচড়। নিপুন হাতে চলছে রঙ তুলির ছোঁয়া।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে রঙ তৈরির উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাজার থেকে কয়েক রকমের রঙ কিনে রাঙানোর কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। সখের হাঁড়িগুলোকে সাজানো হচ্ছে বাহারি সাজে। কোনোটিতে ছাঁপ দেয়া হচ্ছে মাছ, পাখি। আবার কোনটিতে হাতি, ঘোড়াসহ বিভিন্ন ফুল ও লতা-পাতার।

ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল জানালেন, তাদের প্রস্তুতির কথা। তিনি বলেন, কাজ চলছে। তবে বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় শুকানো জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঞ্জয় কুমার পালের পাশেই কাজ করছে বাড়ির দুই গৃহবধু মুক্তি রাণী পাল। কথা হয় তাদের সঙ্গে। মুক্তি জানান, তাদের বাবা দাদারা এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তাদের দেখেছেন বাড়িতে কাজ করতে। সেই সময় সাহায্যও করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, এখন স্বামীর বাড়িতে এসে শেখা কাজ পেশায় পরিণত হয়েছে। সংসার সামলানের পাশাপাশি সখের হাঁড়িগুলোতে বিভিন্ন রঙ চড়াতে হয়। মাত্র একমাস আগ থেকে বৈশাখের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি শুরু করি। আর সারা বছর মাটির তৈজষপত্র তৈরি করেন।

কারুশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল জানায়, ঢাকার বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি মোটামোটি সম্পন্ন। এবছর ঢাকার লোক কারু-শিল্প সোনার গাঁ, জাতীয় জাদুঘর চত্বর, বাংলা অ্যাকাডেমি চত্বর, চিনমৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্র চত্বর মেলা বসবে। মেলার স্টলগুলোতে তাদের হাতের তৈরি অন্তত ১০ প্রকারের মাটির জিনিসপত্র থাকবে।

তিনি বলেন, এসব মেলায় তিনিসহ ছেলেরা থাকবেন সখের হাড়ির স্টল নিয়ে। আগামী ১০ থেকে ১১ এপ্রিল রাজশাহী থেকে তৈরি ‘সখের হাঁড়ি’ ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভালোবেচা বিক্রি হবে বলে আশা করেন তিনি।

 

স/আ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর