বৈদেশিক পরিবর্তনশীল সুদের ঋণ বেড়ে চলেছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীরা ফ্লোটিং রেটে বা পরিবর্তনশীল সুদহারে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী। গত চার বছরে পরিবর্তনশীল সুদহারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে দেশে যেসব বৈদেশিক সহায়তার ঋণ ছিল তার মধ্যে ১১.৬% পরিবর্তনশীল  সুদহারে, ২০১৯ সালে এই হার দাঁড়ায় ১২ শতাংশে, ২০২০ সালে আরো বেড়ে হয় ১৫.৮ শতাংশে এবং ২০২১ সালে হয় ১৬.৭ শতাংশ। আর ২০২২ সালে তা আরো বেড়ে হয়েছে ২৩.৫ শতাংশ।

গত অর্থবছর (২০২১-২২) শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬.৬৬ বিলিয়ন ডলার। ফ্লোটিং সুদহার মানে হচ্ছে, যে সুদ স্থির নয় বরং সময় সময় পরিবর্তিত হয়। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তা বাড়ে বা কমে।

পাইপলাইনে থাকা উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রস্তাব পর্যালোচনায় আগামী বছরগুলোতে পরিবর্তনশীল সুদহারের ঋণ ক্রমেই বাড়বে বলে মনে করছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। আর ঋণ বাড়া মানেই আগামী বছরগুলোতে সুদের অর্থ পরিশোধ করার পরিমাণও বেড়ে যাওয়া। তাই অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কৌশলী হতে হবে। তাঁরা বলছেন, এখন বাংলাদেশের উচিত বাজারভিত্তিক সুদ বা পরিবর্তনশীল সুদহার এড়িয়ে চলা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত যত বেশি সম্ভব স্থির (ফিক্সড) সুদহারের ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা।

পরিবর্তনশীল সুদ নির্ধারণ করা হয় লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার্ড রেট), সোফর (দ্য সেকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট) এবং ইউরিবর (ইউরো ইন্টারব্যাংক অফার্ড রেট)-এর ভিত্তিতে। লন্ডনের এক ব্যাংক আরেক ব্যাংককে যে সুদহারে ঋণ দেয়, তা-ই লাইবর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় আকারের ঋণ দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই লাইবর প্রথা অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে লাইবর রেট ৩.৬ শতাংশের বেশি। অথচ এক বছর আগেও লাইবর রেট ১ শতাংশের কম ছিল। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে লাইবর রেট বেড়েই চলছে। অন্যদিকে বর্তমানে সোফর রেট ২.৫ শতাংশের বেশি। আগামী কয়েক বছরে সোফর রেট কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের যমুনা রিভার ইকোনমিক করিডর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে বাজারভিত্তিক সুদে ১৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থাটি এ প্রকল্পে বাংলাদেশকে সোফর প্লাস ১.০৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এর সঙ্গে কমিটমেন্ট ও অন্যান্য ফি যোগ হবে। এতে দেখা যাচ্ছে, এই ঋণে সব মিলিয়ে ৪ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হবে। অথচ এই প্রকল্পে যদি বিশ্বব্যাংকের নমনীয় সুদহারে বা স্থির সুদহারে ঋণ নেওয়া যায়, তাহলে সুদের হার ২ শতাংশ অতিক্রম করবে না বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা।

এত দিন বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীরা পরিবর্তনশীল সুদহারে সীমা (ইন্টারেস্ট রেট ক্যাপ) বেঁধে দিত। বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) আর এই সুবিধা দেবে না। এডিবিও এ পথে হাঁটবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লাইবর ও সোফর রেট ঊর্ধ্বমুখী থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগামী দুই-তিন বছর বিশ্বব্যাংকের রেগুলার আইডিএ উইন্ডো ফিক্সড রেটের ঋণ বেশি নিতে হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘একইভাবে এডিবির স্থির সুদের ঋণ আগে নিয়ে নিতে হবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরিবর্তনশীল সুদহারের ঋণের দিকে যাওয়া যাবে। ’

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘আমরা আগামী তিন বছর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার অপরিবর্তিত সুদহারে ঋণ নিতে পারব। সুতরাং সুযোগ যেহেতু আমাদের হাতে আছে সেই সুযোগকে আমাদের কাজে লাগানো উচিত। পরে যদি বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালো হয় আমরা পরিবর্তনশীল সুদহারে ঋণ নেওয়ার চিন্তা করতে পারি। ’

 

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ