বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ে করুণ দশা

করোনা পরিস্থিতিতে স্থবির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে প্রকল্পের বিপরীতে বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে বরাদ্দের অর্ধেক।

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয় ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এখনও ২০ শতাংশের নিচে খরচের হার ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। করোনার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল সময়টাতেই কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি যুগান্তরকে শুক্রবার বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন গতিশীল হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে গত মার্চ মাসের শেষ থেকে একেবারেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। যেমন মেট্রোরেল প্রকল্পটিও বৈদেশিক সহায়তানির্ভর। কিন্তু দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই প্রকল্পটির কাজ প্রায় বন্ধ। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ অবকাঠামো তৈরি সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো স্থবির ছিল।

যদিও পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে হয়তো একবারেই বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ত না। তবে করোনা দীর্ঘায়িত হলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়তে পারে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, এই অজুহাতে পণ্য কেনাকাটায় যেন অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি করা না হয়। এ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করতে হবে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে সংশোধিত এডিপিতে গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বৈদেশিক অর্থ খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বরাদ্দের তুলনায় বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করেছে ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল বরাদ্দের ৭০ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছিল ৭১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৫৮ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১১ মাসে ব্যয় হয়েছিল ৬০ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে টাকার অঙ্কে কোনো কোনো অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর বেশি খরচ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম  বলেন, এত কম অর্থ ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক সহায়তানির্ভর প্রকল্পগুলোয় কী ধরনের ক্ষতি হবে সেটি সার্বিকভাবে বলা যায় না। কেননা এটা নির্ভর করে প্রকল্পের নেচারের ওপর। কেননা অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পে এক ধরনের প্রভাব পড়বে। আবার সেবা সংক্রান্ত প্রকল্পে আরেক ধরনের প্রভাব পড়বে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- করোনা পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটি বলা যায় না।

করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যদি কিছুটা উন্নতি হয়, তাহলে আগামী অর্থবছর দ্রুত কাজ এগিয়ে নিয়ে ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১১ মাস পেরিয়ে গেলে অর্থ ব্যয় এখনও ২০ শতাংশের নিচে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হল : ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ রয়েছে ৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। কিন্তু এক টাকাও খরচ করা সম্ভব হয়নি, বাস্তবায়ন শূন্য। সুরক্ষাসেবা বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।

ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ১১ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ১৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, বাস্তবায়ন হার ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ১৯১ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন হার ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ ৪০৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। আইন ও বিচার বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ সাড়ে তিন কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৫০ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত ১১ মাসে তুলনামূলক বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয়ে পিছিয়ে থাকা অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে : নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

 

সুত্রঃ যুগান্তর