হাসি-খুশি আর বৃষ্টি আসবে না স্কুলে!

এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট:

সপ্তাহে শুক্রবার স্কুল বন্ধ। এই দিনে সকাল থেকে দুপুর, আবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে খেলতাম। হাসি, খুশি আর বৃষ্টিসহ আমরা ৭-৮ জন মিলে সবাই এক সাথে খেলতাম। অনেক মজা করতাম। হাসি আর খুশিকে দেখতে প্রায় একই রকম ছিলো। এখন থেকে আর ওরা খেলতে আসবে না। আর কোনদিন স্কুলেও আসবে না। চলে গেছে না ফেরার দেশে। অশ্রুসিক্ত নয়নে এভাবেই বৃষ্টি, হাসি ও খুশীকে হারানোর দুঃখ প্রকাশ করছিলো ওদের সহপাঠীরা।

একসাথে আগুনে পুড়ে মারা যাবে এমন ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা তাদেও সহপাঠীরা। এ মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসছেন এই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হতে। সবার মুখে একই কথা, কিভাবে এতগুলো মানুষ এক সাথে মারা গেলো?

গৃহকর্তা মোমিন আজ থেকে ৩০ বছর আগে বাবা ও মাকে সাথে নিয়ে দিনাজপুরের ডোমার উপজেলা থেকে এখানে বসবাস করে আসছেন। বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে রাইস কুকারের সংযোগ থেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগের সৃষ্টি হয়ে পুরো বাড়ীতে আগুন লেগে যায়। এতে একই পরিবারের ৮ জন নিহত হয়। নিহত সহপাঠীদের টানে শুক্রবার বিকেলে শহরের দু’টি বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চলে আসেন ঘটনাস্থলে। সকলের চোখে মুখে শোকের মাতম।

বড় মেয়ে বৃষ্টির বয়স ১৪ বছর। সে ছিল মেধাবী ছাত্রী। পাশাপাশি ওর বিচরণ ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কাউটিং ও ক্রীড়াতে। সে জয়পুরহাট শহরের সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তার যমজ দুই বোন হাসি ও খুশি। ওদের বয়স ১২ বছর। ওরা পড়াশোনা করত শহরের কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যানিকেতনে। দুজনেই এবার সপ্তম শ্রেণীতে।

সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার ম-ল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বৃষ্টি একজন মেধাবী ছাত্রীই ছিলো না, বিদ্যালয়ের যে কোন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করত। সে নৃত্য পরিবেশনে খুব ভাল পারতো। যেমন সাংস্কৃতিতে দক্ষ, তেমনি স্কাউটেও ভাল। আন্তক্রীড়া হ্যান্ডবল প্রতিযোগীতায় সে পুরস্কারও পেয়েছে। এ ভাবে অকালে বৃষ্টিকে হারাতে হবে, এমনটা কখনও ভাবিনি। তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত ও শোকাহত।

কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মাহবুব উল আলম বলেন, হাসি ও খুশি ছিল বেশ চমৎকার মেয়ে। যমজ বোন হওয়ায় কখনও কে হাসি আর কে খুশি কথা না বলে বুঝা যায়নি। ওদের পরিবারের সবার এক সাথে মৃতু আসলে মেনে নেওয়ার মত নয়।

স/বি