বৃষ্টির জন্য আজ প্রেম নেই আছে অনীহা ।। পীর হাবিব

বৃষ্টিমুখর বর্ষা বা বাদলাদিন আমাকে টানে। এখনো বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে।
সুযোগ হলেই ভিজি। প্রবল বৃষ্টিতে কতরাত কতদিন একটা বড় সময় ভিজতে ভিজতে ঘরে ফিরেছি! প্রকৃতির বসন্তের চেয়েও বর্ষা আমাকে জাগায়। বৃষ্টি কেবল সবুজ কৃষকেই নয় আমাকেও জাগায়।

কবিগুরু বলেছেন, এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোরবরিষায়। বৃষ্টির শব্দে নিঃশব্দ হয়ে থাকতে, ভাবতেই নয় তুমুল আড্ডাও ভালোলাগে। একাকিত্বও আনন্দ দেয়। প্রিয়জনকে নিয়ে মুখোমুখি বসে থাকতে, ব্যাকুল চিত্ত নিয়ে ভালোবাসার কথা বলতেও আকুলি বিকুলি কনে মন। বুকের ভেতর শব্দ বাজে ঘুঙ্গুরের মতোন। খলবল খলবল করে কত কথা তাকে বলতে।

প্রতি বছর বৃষ্টি নামলেই বাড়ি যাই। টিনের ঘরে ঘুমাই। বড় শান্তির ঘুম হয়। সন্ধার আধারে বারান্দায় দোলনায় বসে বসে বৃষ্টির সাথে একাত্ব হই! আনন্দে সুখ উপচে পরে। বিরহী হই, কবিমন জেগে ওঠে, আমিও প্রেমিক হই। বৃষ্টি যেনো ধুয়ে নেয় ক্লান্তি ও সকল কালিমা!

কিন্তু এবার বৃষ্টির প্রতি রাগ অভিমান অনিহা খুব বেশি। এবার অতি বৃষ্টিতে কৃষকের বুকটা ভেঙ্গেছে প্রথম, তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ন হাওরের ফসল। তারপর আরো দুঃসংবাদ। পাহাড়ে মৃত্যুউপত্যকা, লাশের মিছিল। প্রায় দুশো। কি করুন মর্মান্তিক মৃত্যু! শোকার্ত দেশ। ডেডসিটি ঢাকার সব রাজপথ বৃষ্টি নামলেই তলিয়ে যায়।

রমজানে রোজদারসহ সব মানুষের জীবনে নামে দুর্ভোগ। বাস, প্রাইভেটকার, সিএনজির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রামে্ও জনপথে সাতার কাটে নারীপুরুষ শিশু। সিলেটেও ডুবে যায় সব সড়ক! কলাগাছের ভেলা যেনো ভালো গাড়ির বদলে! মানুষ বাড়ছে, উন্নয়ন বাড়ছে, দূর্নীতি বাড়ছে, মৃতের হার বাড়ছে, জনদূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। আজ ঢাকায় এক সন্ধার বৃষ্টিতেই মতিঝিল আরামবাগ পল্টন শান্তিনগর নিজ চোখে দেখলাম ডুবে যেতে।

দেখলাম নগরজীবনের যন্ত্রণা আর বেহালদশা! জীবিকার টানে এই অভিশপ্ত নগরীতে পরে থাকি কেনো! কিন্তু একে একে সব নগর ও শহরেইতো আজ যানজট, জলজট আর জনদুর্ভোগ গণদূর্নীতি! কোথায় যাই? কেবল বৃষ্টির প্রতি অনীহা অভিমান আমার, প্রেম নয়, রাগ।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক