বৃষ্টিভেজা দুপুরে বিউটি বোর্ডিংয়ে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এল’ প্যাটার্নের দ্বিতল বাড়িটির মূল ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। ইট কাঠের শহরের মাঝে এক চিলতে আঙিনায় পরম যত্নে তৈরি করা হয়েছে বাগান। আছে হরেক রকম ফুলের গাছ। একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে শতবর্ষী ভবনের গায়ে সাঁটানো দুটি লম্বাটে সাইনবোর্ড। যার একটিতে লেখা আছে দ্বিতল বাড়িটির ইতিহাস আর অন্যটিতে বিখ্যাত সব কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-অভিনেতাদের নাম; যাদের পদচারণায় একসময় মুখরিত ছিল এই বাড়িটি। 

বলছি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিউটি বোর্ডিংয়ের কথা। একসময় এ জায়গাটি ছিল বাংলা সাহিত্য-সংস্কৄতির গুণী মানুষদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র। সমমনা মানুষদের আড্ডা চলত দিনরাত। একসময় এখানে আসতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কবি শামুসর রাহমান, বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশির, রফিকুন নবী, ড. আনিসুজ্জামান, কবি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, নিতুন কুণ্ডু, কবি সমুদ্র গুপ্ত, চিত্রনায়ক ফারুক-রাজ্জাক-প্রবীর মিত্রসহ শিল্পকলা জগতের অসংখ্য খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। তাদের নামের তালিকা পড়তে অনেকটা সময় কেটে যাবে। 

বিউটি বোর্ডিং প্রথমে ছিল একটা জমিদারবাড়ি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় জামিদার পরিবারটি ভারতে চলে যায়। তখন এখানে গড়ে ওঠে ‘সোনার বাংলা প্রেস’ নামের একটি ছাপাখানা। সেই ছাপখানা কলকাতায় চলে গেল জায়গাটি কিনে নেন প্রহ্লাদচন্দ্র সাহা ও তার ভাই নলিনীকান্ত সাহা। সেই বাড়িটিতেই নলিনীকান্ত সাহার বড় মেয়ে বিউটি সাহার নামে শুরু হয় ‘বিউটি বোর্ডিং’। বহু গুণীজনের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে বাড়িটির প্রাঙ্গণ। এরপর আসে ১৯৭১ সাল। পাকহানাদার বাহিনী জেনে যায় বাঙালির এই সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের মিলনমেলার কথা। ২৮ মার্চ এখানেই শহীদ হন প্রহ্লাদ সাহাসহ আরও ১৭ জন। 

নিচতলায় একপাশে রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা। টেবিলের ওপর স্টিলের প্লেট আর গ্লাস সাজানো। ভেতরে ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানায় কর্মীরা। প্রথমে প্লেট ধোয়ার পানি দেওয়া হয়। এরপর আসে ভাত আর নানান রকম খাবার। এখানে খুব কম দামে লোভনীয় সব খাবার পাওয়া যায়। এখানে সবসময় সরষে ইলিশ পাবেন। মূল্য সময়ভেদে ১৮০-২৩০ টাকা। মুরগি ও খাসির মাংস ১০০, খিচুড়ি প্রতি প্লেট ৪০ টাকা, পোলাও ৫০ টাকা, সবজি ৩০ টাকা, বড়া ১০, চচ্চড়ি ৩০ আর একবাটি মুড়িঘণ্ট মিলবে মাত্র ৭০ টাকায়। এ ছাড়া এখানে ৩০ টাকা মূল্যে দই পাওয়া যায়। আছে হরেক রকম মজাদার ভর্তা।

বর্ষণমুখর এক দুপুরে এই ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণে গিয়ে ইতিহাসে ডুবে গিয়েছিলাম। সেইসঙ্গে রসনা তৃপ্তি তো আছেই। শতবর্ষী পুরনো একটি ভবনে বসে ইলিশ-খিচুড়ি দিয়ে ভুঁড়িভোজের সময় উঠোনের সাজানো বাগানে বৃষ্টির ক্রন্দন অপূর্ব এক রোমান্টিক অনুভূতি এনে দেবে মনে। ভবনের কড়ি বরগাগুলো সাক্ষ্য দেবে ইতিহাসের। এমন অনুভূতির জন্য এই বর্ষায় যেতে পারেন বিউটি বোর্ডিংয়ে। রাজধানীর সদরঘাটে গিয়ে রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে চলে যান ১ নং শ্রীশ দাস লেনে। ফটকে দাঁড়ালেই পাবেন ইতিহাসের ঘ্রান।