বিষণ্নতার সঙ্গে জিনের সম্পর্ক নিয়ে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আধুনিক জীবনে ক্রমেই আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়া রোগটির নাম বিষণ্নতা। বহু যুগ ধরে অসংখ্য গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (এমডিডি)-এর সঙ্গে মানবদেহের জিনের সম্পর্ক বিষয়ে খুব কমই জানতে পেরেছেন। নতুন এক গবেষণায় গোটা অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নেচার জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত নতুন ওই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা ১৭টি জেনেটিক্স কারসাজির কথা বলেছেন যা এসএনপিএস (উচ্চারণ স্পিপস) নামে পরিচিত। এগুলো এমডিডি-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

‘১৩অ্যান্ডমি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত জেনোমিক্স তথ্য প্রদানকারী হাজার হাজার মানুষের জেনিটিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এ গবেষণায়। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিষণ্নতার সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো জিনের সম্পর্ক খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

২০১৩ সালে ‘দ্য ল্যানসেট’ জার্নালে এবং ২০১৫ সালের ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত দুটো ভিন্ন গবেষণাপত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা পরিচালিত হয়। এ রোগের সঙ্গে জিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয় ওই গবেষণাগুলোতে।

সম্প্রতি ‘স্টারটক’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ২৩অ্যান্ডমি-এর সিইও অ্যালা ওজসিককি জানান, আমরা মানুষের জেনোমকে আরো বেশি বুঝতে এবং এর নানা সুবিধা-অনুবিধা নিয়ে গবেষণা করে চলেছি। আমাদের কাছে ১০ লাখ মানুষের জেনেটিক তথ্য রয়েছে।

এই মানুষগুলো এখানে সেখানে বিশেষজ্ঞদের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন যার যার জেনেটিক্স বিষয়ে জানতে। আর এটা বেশ ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। মানসিক রোগ মূলত জেনেটিক্সের জটিল কার্যক্রম, পরিবেশ এবং আচরণগত কারণের মিশ্রণ। এসব শর্ত বিপুল সংখ্যক মানুষের ওপর কাজ করে।

নতুন গবেষণাকর্মে ৭৫ হাজার ৬০০ মানুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এরা সবাই বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া ২ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ মানুষের বিষণ্নতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এমডিডি সমস্যার সঙ্গে মানুষের ডিএনএ-এর ১৫টি অংশের যোগসাজশ খুঁজে পেয়েছেন। মানসিক সমস্যার জন্যে এসব অংশের ভূমিকা নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিল বিশেষজ্ঞদের মনে।

তারপরও স্পষ্ট সম্পর্ক খুঁজে পেতে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। আসলে তথ্যগুলো মিলেছ কেবলমাত্র যারা নিজেদের জেনেটিক রিপোর্ট পেতে আগ্রহী হয়েছেন। এরা সবাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু আরো অসংখ্য মানুষ আছেন যারা এমডিডি-এ ভুগছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সাইকিয়াট্রির প্রফেসর জোনাথন ফ্লিন্ট জানান, মানসিক রোগের সঙ্গে জিনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট গবেষাকে এগিয়ে নেওয়া হবে। বিষণ্নতা বা আলঝেইমার্স-এর মতো রোগকে মস্তিষ্কের রোগ বলা হয়। তা সত্ত্বেও এসব রোগ ক্যান্সার চেয়ে কোনো অংশে কম মারাত্মক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো কিভাবে মস্তিষ্কের রোগ হয় তা বুঝে ওঠা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন।তবে এসব রোগ কারো দোষের কারণ নয়। কিন্তু এগুলো যে রোগ তা মনে রাখতে হবে। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

সূত্র: কালের কণ্ঠ