সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার শেষ হচ্ছে ৫৪তম এ আয়োজনের প্রথম পর্ব।

কাল রোববার বাদ ফজর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে সোমবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

এর আগে শুক্রবার আম ও খাস বয়ান, তালিম ও তাশকিল, নামাজ-কালাম ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে কাটল বিশ্ব ইজতেমার প্রথমদিন। এদিন জুমার জামাতে শরিক হন কয়েক লাখ মুসল্লি। মাঠে জায়গা না পেয়ে আশপাশের রাস্তা, বাড়িঘর, দোকানপাট এমনকি নদী ও সড়কে বিভিন্ন যানবাহনেও শরিক হন জুমার জামাতে।

তাবলিগের শূরা সদস্য মাওলানা জোবায়ের আহমেদ এ জামাতে ইমামতি করেন।

শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে এর আগেরদিন বৃহস্পতিবার আসরের পরই শুরু হয়েছিল ইজতেমার কার্যক্রম।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান প্রমুখ ময়দানে জুমার জামাতে অংশ নেন।

নামাজে শরিক হন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা শাহ আহমেদ শফীসহ দেশের বহু বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম।

জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকেই ইজতেমা ময়দানমুখী মানুষের ঢল নামে। সময় যত গড়াতে থাকে এ ঢল বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যেই ভরে যায় মাঠ। পরে মাঠে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা জায়নামাজ, হোগলা-পাটি, পলিথিন, চট ও পলিবস্তা, বাঁশ কাগজ, খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে পড়েন মাঠের রাস্তা, আশপাশের গলি ও ভবনে।

১টার দিকে তাতেও ঠাঁই না হলে মুসল্লিরা ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-আবদুল্লাপুর, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক এবং তুরাগ নদে (নৌকাসহ বিভিন্ন বাহন) বসে পড়েন। স্থানীয়রা বলেন, সাম্প্রতিককালের মধ্যে এত মুসল্লি এর আগে হয়নি। এটিকে তাই বৃহত্তম জুমার জামাত বলছেন তারা।

নামাজ শেষে একসঙ্গে ফিরতে গিয়ে পরিবহন সংকটে এসব মুসল্লি বিপাকে পড়েন। পরিবহনগুলো আদায় করে অতিরিক্ত টাকা। এরপরও হেঁটেই ফিরতে হয় বেশিরভাগ মানুষকে।

ইজতেমা নিয়ে সংঘাতের শঙ্কা থাকলেও প্রথমদিন নির্বিঘ্নেই কেটেছে মুসল্লিদের। এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় মুসল্লিরাও বয়ান-তাশকিলে মনোযোগ দিতে পারছেন।

তবে পথের ধুলোবালি ও কয়েক স্থানে পানি সংকট যথেষ্ট ভুগিয়েছে মুসল্লিদের। আর রান্না করার সময় এক স্থানে আগুন ধরে গেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ভয়ে পালাতে গিয়ে ২০ মুসল্লি আহত হন। এর মধ্যে চার-পাঁচজনের শরীরের সামান্য অংশ পুড়ে গেছে।

প্রথম দিনে যারা বয়ান করলেন : বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক আম বয়ান করেন। তা বাংলায় ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা নূর-উর-রহমান। বাদ জুমা বয়ান করেন সৌদি আরবের মাওলানা শেখ গাছছান, বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আবদুল মতিন। বাদ আসর বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা জুহায়েরুল হাসান, অনুবাদ করেন মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন।

বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। বাংলায় ভাষান্তর করেন মাওলানা জোবায়ের আহমেদ। মূল বয়ান আরবি ও উর্দুতে হলেও সঙ্গে সঙ্গেই তা অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ ২৪ ভাষায়। এসব বয়ানে ইমান ও আমলের গুরুত্ব, মুসলমান হিসেবে করণীয় ও দ্বীনের পথে চলার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।

সকালে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের মিম্বর থেকে খাস বয়ান, ওলামা হজরতদের জন্য খাস বয়ান, শিক্ষকদের জন্য বয়ানের মিম্বার থেকে খুসুসি বয়ান ও বধিরদের জন্য পৃথকভাবে বয়ান করা হয়।

আরও ২ মুসল্লির মৃত্যু : ময়দানে বৃহস্পতিবার রাতে ২ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার ঝাউদিয়া গ্রামের আফছার আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম নারু (৬৫) হৃদরোগে ও ফেনী সদরের একাডেমি গ্রামের নজীর আহমেদের ছেলে মো. শফিকুর রহমান (৬৮) শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মারা যান।

মোনাজাত উপলক্ষে যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে : শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ময়মনসিংহ থেকে আগত মুসল্লিরা ভোগড়া চৌরাস্তায় নেমে হেঁটে ময়দানে আসতে হবে। এদিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক হয়ে আসা মুসল্লিরা মীরের বাজার নেমে যাবেন এবং ঢাকা থেকে আসা মুসল্লিরা টঙ্গী ব্রিজে নেমে ইজতেমা ময়দানে আসতে হবে। এ ছাড়া পশ্চিম-দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা মুসল্লিরা কামরাপাড়া ব্রিজে নেমে ইজতেমা ময়দানে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হবে। তবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। শুক্রবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমান ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।

পানি সংকট, পকেটমার গ্রেফতার : বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ পার্শ্বে মাসলেহাল জামাতের কামরার পাশে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। তাই অনেক মুসল্লির ওজু, গোসল ও শৌচাগার ব্যবহারে সমস্যায় পড়েন। ময়দানের চারপাশের রাস্তায় ভিক্ষুকের কারণে ময়দানে আসা দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের চলাচলে বিব্রত হতে হচ্ছে। ময়দানের ভেতরে হকারদের উৎপাতও ভালোই ভোগাচ্ছে মুসল্লিদের। শনিবার রাতে একজন পকেটমারকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম মো. রফিকুল ইসলাম (১৮)। সে নরসিংদীর মনোহরদী থানার চর মান্দালিয়া গ্রামের রুকন উদ্দিনের ছেলে।

ময়দানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী : শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন দু’পক্ষের শীর্ষ মুরুব্বিরাই করেছেন। তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইজতেমা চলছে। সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সরকার শুধু বলেছে, আপনারা দু’পক্ষ একসঙ্গে ইজতেমা করবেন এতে করে আপনাদের মধ্যে যে শঙ্কা আছে, ভয়ভীতি আছে তা দূর করার দায়িত্ব আমাদের। ইনশাআল্লাহ এটা কোনো মতে হবে না। ইজতেমায় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।

সিলিন্ডার বিস্ফোরণ গুজবে আতঙ্ক : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া জানান, বয়ান মঞ্চের দক্ষিণে রান্না করার সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি গ্যাসের চুলার আগুল বর্ধিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের গুজবে আতঙ্কিত হয়ে মুসল্লিরা ছোটাছুটি শুরু করেন। এতে আশপাশে চুলার গরম হাঁড়ি-পাতিল পড়ে গিয়ে, চুলায় পা পড়ে, আগুনে পুড়ে ও দা-বঁটিতে কাটা পড়ে ২০ মুসল্লি আহত হন।

র‌্যাব-১-এর কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই ঘটনায় আহত ও দ্বগ্ধ কয়েকজন মুসল্লি র‌্যাবের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহীর হাসান মাহমুদ, খুলনার খালিদ হাসান, টাঙ্গাইলের জাবেদ শিকদার, রাজশাহীর জোবায়ের, জামালপুরের নজরুল ইসলাম, ঢাকার সাভারের মনিরুজ্জামান, রাজশাহীর হারুন-অর রশিদ, লক্ষ্মীপুরের জাহিদ, সিরাজগঞ্জের জাহিদুল ইসলাম, মাহদুল হাসান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মুজাহিদুল ইসলাম, ওমায়ের, বরিশালের আরিফুল ইসলাম, ময়মনসিংহের আজহারুল ইসলাম।