বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ জ্বালানি কম্পানি লোকসানের চাপে

করোনা মহামারিতে একদিকে কমেছে জ্বালানি তেলের চাহিদা, অন্যদিকে সরবরাহ ছিল বেশি। উভয় চাপে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসানে পড়ে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি কম্পানিগুলো, অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ারও আবেদন করে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের পাঁচ শীর্ষ জ্বালানি কম্পানিকেই লোকসান গুনতে হয় পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এই পাঁচ কম্পানি হলো বিপি, শেভরন, এক্সনমোবিল, রয়াল ডাচ শেল ও টোটাল।

এ অবস্থায় অনেক কম্পানি সবুজ জ্বালানির দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিপি ঘোষণা দিয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তারা দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। এ শতকের মাঝামাঝিতেই ‘নেট শূন্য’ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে যেতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাককেনঝির লুক পারকার বলেন, ‘যাঁরা ব্যবসায় পরিবর্তন আনতে চান এটাই সময়। আমরা মনে করছি বিপি একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।’

সাম্প্রতিক তেল রপ্তানিকারক বড় দেশগুলোও উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বিমান সংস্থাগুলোতে তেলের চাহিদা কমায় বিপুল মজুদ নিয়ে বিপাকে পড়ে উৎপাদনকারী দেশগুলো। এমনকি এই বিশাল মজুদের কারণে গত এপ্রিলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তেলের দাম ঋণাত্মক হয়ে যায়। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুদ থেকে তেল সরানোর জন্য ক্রেতাদের উল্টো অর্থ দিয়ে তা বিক্রি করেন। এ অবস্থায় সরকারগুলোর মনোভাবেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। অনেক দেশ কার্বন গ্যাস নির্গমন শূন্যতে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগ শুরু করেছে।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইইউভুক্ত ২৭ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানিকে সরিয়ে প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক এম্বারের গবেষণায় বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম ভাগে ইইউর ২৭ দেশে বায়ু, সৌর, হাইড্রো ও বায়োএনার্জির মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৪০ শতাংশ। এর বিপরীতে গতানুগতিক জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এসেছে ৩৪ শতাংশ। ফলে জানুয়ারি থেকে জুন—এই সময়ে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশ।

পেনসিলভানিয়ার হোয়ার্টন বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক অর্থোর ভ্যান বেনথেম বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি যদি তেল ও গ্যাসের বিনিয়োগকারী হই তাহলে আমিও উদ্বিগ্ন হব এ কারণে যে আমি আমার বিনিয়োগকে একটি সেকেলে ও ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে ঢালছি।’ এদিকে রিস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, কম্পানিগুলো ব্যয় সংকোচন করায় এ বছর বিশ্বজুড়ে তেল ও গ্যাস প্রকল্পের অনুমোদন ৭৫ শতাংশ কমবে।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৪৫ ডলারের মধ্যে উঠানামা করছে। এর পাশাপাশি ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দামও ৪৫ ডলারের নিচে রয়েছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ