বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১.৬%

দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রভাবে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। কমে এসেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এসব পরিস্থিতি এই অঞ্চলের মানুষদের চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার পরও প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ। করোনার প্রভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ১.৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে ০.৫ শতাংশ। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ভারত। তাদের প্রবৃদ্ধি হবে মাইনাস ৯.৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কেন দুই শতাংশের নিচে নেমে আসবে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। প্রবাসী আয়েও ধাক্কা লেগেছে। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৭০ শতাংশের মতো। স্থবির হয়ে গেছে কর্মসংস্থান। এসব কারণে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ অর্জিত হবে।

যদিও সরকার এ বছরের বাজেটে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, যা বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের সঙ্গে বিস্তর ফারাক। গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চলমান মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এই খাতে কর্মরত লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান মার্সি টেম্বন বলেন, করোনার কারণে বৈশ্বিক যে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়বে। তবে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা ছিল সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। অবশ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে আরো বেশি নজর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো যাতে টেকসই হয়, সে জন্য সরকারকে আর্থিক খাত ও ঋণ ব্যবস্থাপনার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করার দিকে নজর দিতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চে বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের পর সরকার প্রায় দুই মাসের মতো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। যার ফলে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া পাকিস্তানে ৬০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৫০ শতাংশ এবং ভারতে ৪০ শতাংশ শিল্প উৎপাদন কমে গেছে।

এতে দেখা যায়, করোনায় শিল্প উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে নেমে এলেও আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৩.৪ শতাংশ অর্জিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটির মতে, করোনার কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসী আয়েও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এসব কারণে মানুষের ভোগব্যয় বা খরচ কমে গেছে। তা ছাড়া করোনার কারণে দেশের ব্যক্তি পর্যায়েও বিনিয়োগে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি করে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে আসতে পারে। একই সঙ্গে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মীদের আয় কমে যাবে। এর ফলে মানুষের ভোগব্যয়ও কমে যাবে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে বেশ ভুগতে হবে বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ