বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বেসরকারিকরণ কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের আইন ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ কার্যকরের এ ঘোষণা দিয়ে গেজেট জারি করে সরকার।

 

যে লক্ষ্য নিয়ে নব্বইয়ের দশকে বিনিয়োগ বোর্ড আর ২০০০ সালে বেসরকারিকরণ কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় গতকাল ৩১ আগস্ট ছিল এ দুটি সংস্থার শেষ দিন। আজ থেকে আর বেসরকারিকরণ কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ড থাকছে না। এ দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে চালু হচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

 

এরই মধ্যে নবগঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কাজী মো. আমিনুল ইসলাম। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিডার কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে সংস্থাটির নতুন পথচলাও শুরু হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। উদ্দীপনা বাড়বে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

 

এদিকে সূত্র জানায়, বিডার নতুন আইনে সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান এখন ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত কোনো জমি ব্যক্তি খাতে লিজ দিতে চাইলে তিনি নিজেই অনুমোদন দিতে পারবেন। আগে যেটি ছিল মাত্র ১০ কোটি টাকা। এর বেশি হলে সেটি পাঠাতে হতো অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটিতে।

 

জানা যায়, বছর কয়েক আগে সাহারা গ্রুপ, স্যামসাং, সনি, অ্যাডিডাসসহ বিশ্বের অনেক নামিদামি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখালেও বিনিয়োগ বোর্ড তাদের জমি দিতে পারেনি। একদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলো জমির অভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না, অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোতে জমি পড়ে থাকলেও তা কাজে আসছে না। বিনিয়োগ বোর্ডের নেই জমি, আর বেসরকারিকরণ কমিশনের ক্ষমতা।

 

এ কারণে ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এমন বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগী হয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কাজে গতি আনতে ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশনকে একীভূত করার নির্দেশ দেন।

 

নির্দেশ পাওয়ার পর ওই বছরের ৩০ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি) মো. মঈন উদ্দিনকে সভাপতি করে সাত সদস্যের ‘প্রাইভেটাইজেশন ও বিনিয়োগ বোর্ড একীভূতকরণের প্রস্তাব প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়।

 

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দুই সংস্থাকে বিলুপ্ত করে নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা নিয়ে একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করে ওই কমিটি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৬ সংসদে পাস হয়। এরপর থেকে শুরু হয় নবগঠিত বিডার কার্যক্রম নিয়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ থেকে পথচলা শুরু নতুন সংস্থাটির।

 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি গভর্নিং বোর্ড থাকবে, যার প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং ভাইস-চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। ১৭ সদস্যের এই বোর্ডে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অন‌্য মন্ত্রীরাও থাকবেন।

 

মন্ত্রিসভায় আইনটি অনুমোদনের পর তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত এই কর্তৃপক্ষের কাজ হবে বেসরকারি খাতে স্থাপিত সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংযোগকারী শাখা ও প্রতিনিধি কার্যালয় নিবন্ধন করা।

 

তবে বেপজা, ইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরী, হাইটেক পার্ক অথরিটির বিনিয়োগ এবং সরকারি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিনিয়োগ এই কর্তৃপক্ষের আওতায় আসবে না বলেও জানান তিনি।

সূত্র:রাইজিংবিডি