অমিত হাসান
বাঙালি জাতির জীবনে আজ এক আনন্দের দিন। এমনি এক দিনের প্রতীক্ষায় কেটেছে বাঙালির হাজারো বছর। দেখতে দেখতে বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্ণ করে ৪৭ এ পা রাখবে আমাদের বাংলাদেশ। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা পূর্ণতা পায় ১৬ ডিসেম্বর।
প্রতি বছর রাজশাহীবাসী বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করে দিবসটি। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর উভয়দিন রাজশাহীর সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ন পয়েন্ট গুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
জোনাকি পোকা ঠিক যেভাবে আঁধারের মাঝে আলো জ্বালিয়ে রাতের আকাশ ভরিয়ে তুলে! ঠিক তেমনি করে নগরীর আলোক সজ্জায় ব্যবহৃত বাতিগুলো সবুজ নগরী রাজশাহীকে আলোকিত করে তুলেছে। বিশ্বকে জানান দিচ্ছে আমাদের “বিজয় দিবসের” কথা।
রাজশাহী ঘুরে দেখা যাচ্ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে স্টেশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ক্যাম্পাস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী কলেজ, মহানগরীর কামারুজ্জামান চত্বর, মহানগর আওয়ামীলীগ অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় লাল, সবুজ, নীল রঙের বাতির আলোয় এসেছে বিজয়ের আমেজ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান স্মৃতি চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ স্থাপনাগুলোতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সাজসজ্জা।
রাতের মনোমুগ্ধকর যানযটহীন রাজশাহী যেন সেজেছে এক অপরুপ সাজে। নগরবাসী মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন, আবার কেউ কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। ইতোমধ্যে রাজশাহীবাসীর ফেসবুক পেজ গুলোতে ছড়িয়ে পরেছে নগরীর বিজয় আমেজের চিত্র।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে এবছর ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এজন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরইমধ্যে কর্মসূচি নির্ধারণ এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে একথা জানানো হয়।
বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ১৫ ডিসেম্বর দিনগত রাত ১২টা ১ মিনিটে রাজশাহী জেলা পুলিশ লাইনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করা হবে। রাত ১২টা ১ মিনিটে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এলাকার স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
ওইদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। পরে তিনি পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী ও পথশিশু এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের সম্মিলিত কুচকাওয়াজ অভিবাদন গ্রহণ করবেন। বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে মহানগরীর কামারুজ্জামান চত্বরে।
রাজশাহী ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামী গান, কবিতা আবৃত্তি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের গ্রিন প্লাজায় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
এদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রবেশমূল্য ছাড়া রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, পার্ক, চিড়িয়াখানা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় কারাগার, সরকারি শিশুসদন, শিশু নিবাস, অন্ধ, মূক ও বধির বিদ্যালয়, সেফ হোম, এস ও এস শিশু পল্লি, শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং বেসরকারি এতিমখানায় বিজয় দিবস উপলক্ষে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
জাতির সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে সব মসজিদে বাদ জোহর দোয়া এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধামত সময়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। সিনেমা হলে এবং গণযোগাযোগ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর মোড়সহ জনবহুল স্থানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে।
বিকালে রিভার ভিউ কালেক্টরেট স্কুলে আলোচনা সভা ও নারীদের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিকেলেই রাজশাহী জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মেয়র একাদশ বনাম বিভাগীয় কমিশনার একাদশের মধ্যে।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনেকে বাণী প্রদান করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা স্মরন করেছেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘১৯৭১ সালে রক্তাত্ব ইতিহাসের মধ্যে পরিস্ফুটিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পূর্বে আগ্রাসন অপশক্তির দ্বারা আমরা শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলাম। নিপীড়নের যুগপর্বে শুরু হয় পাকিস্তানী বাহিনীর নারকীয় নিষ্ঠুরতা। তাদের হত্যা, লুণ্ঠন, আগুন, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বন্দিসহ ভয়াল বর্বরতায় অতিষ্ঠ বাঙ্গালী জাতি ঝাপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ওড়ে লাল-সবুজের বিজয় পতাকা। তবে বিজয়ের ছেচল্লিশ বছর পরও সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামো গণতান্ত্রিক অবয়বে আসেনি। জাতীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে আমরা এখনও রণক্ষেত্রে। তাই বিজয়ের এ মহান দিবসে সবাইকে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নীতকরণে অংশ নেয়ার আহবান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণী প্রদান করেছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার।
তিনি তার বাণীতে রাজশাহীবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দনও জানিয়েছেন। পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি।
মোহাম্মদ আলী সরকার তার বাণীতে বলেন, একাত্তরের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালী জাতি মুক্তির নেশায় জেগে উঠেছিল। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা হাতে অস্ত্র ধরেছিল। স্বপ্ন দেখেছিল সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে জাতির সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
শহীদ জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে শপথ নিতে হবে বঙ্গবন্ধু ও শহীদ জাতীয় চার নেতার আদর্শ ধরে রাখার। ঝড়-ঝাপ্টা যাই আসুক, থাকতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে।
স/অ