বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন, বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন

পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া দুর্গাপুরে) আসনে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহন সম্পূর্ণ হয়েছে। পুঠিয়া ও দুর্গাপুর দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসনে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতীহীন ভাবে এ ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়।

তবে কেন্দ্র দখল, বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো এবং প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে নিজের ভোট না দিয়েই নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল।

এদিকে, ভোট গ্রহন চলাকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতীহীনভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের একদিন আগেই প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয় এবং প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রশাসন।

প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরে দুর্গাপুর উপজেলার পৌর এলাকার রইপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্য ফারুকের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে সার্জেন্ট ফারুকের মাথায় ও হাতে রডের আঘাতে গুরুতর জখম হয়। তার মাথায় ৬ টি সেলাই লাগিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও নারী ভোটাররা লাইন ধরে ভোট দিয়েছেন। তবে বিএনপির ভোটারদের কাউকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই কোন বিএনপির ভোটারদের ভোট দিতে দেয়া হয়নি। তবে ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল কেন্দ্রে ঘুরে রোববার দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন।

পুঠিয়া পৌর এলাকার গন্ডোগোহালী মহল্লায় অবস্থিত নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল অভিযোগ করে জানান, আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজন সকাল থেকেই অস্ত্র হাতে প্রতিটি ভোট কেন্দ্র দখল করে অবস্থান নেয়। সেখানে বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে যেতে দেয়া হয়নি। কোন কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টকে থাকতে দেয়া হয়নি। ভোট কেন্দ্রের আশে পাশে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখামাত্র তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ক্যাডাররা। প্রশাসনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও এর কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি।

বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মন্ডল আরো জানান, ভোটের আগেরদিন রাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে কেউ যেন ভোট কেন্দ্রে না যায়। প্রশাসনের সহযোগীতায় পুলিশের সামনে প্রতিটি কেন্দ্রে দা কুড়াল হাসুয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় অন্ত্র নিয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রে অবস্থান করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যপারে অভিযোগ দিতে থানা পুলিশ, ইউএনও বিজিবি কাউকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

তিনি নিজে ভোট না দেয়ার ব্যপারে নজরুল ইসলাম বলেন, জনগন যেখানে ভোট দিতে পারেনি সেখানে আমিও ভোট দেই নি।

এদিকে এ আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডাঃ মনসুর রহমান রোববার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলার কিসমত গণকৈর ইউনিয়নের আড়ইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। এর আগে তিনি তার মরহুম বাবা ও মায়ের কবর জিয়ারত করে দোয়া করেন।

ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে গন্ডোগোহালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, পীরগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ক্ষুদ্রজামিড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, বড়রাঙ্গামাটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রের পাশে আওয়ামীলীগের লোকজন দেশীয় অন্ত্র হাতে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকেন। এছাড়াও পালোপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে লাঠি হাতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লোকজন অবস্থান করেছেন। তবে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই বিএনপির সমর্থকদের ভোট দিতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল’র।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, পুঠিয়ার কোথাও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, পুঠিয়া উপজেলার ৬০ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন সংঘর্ষ ঘটার খবর পাইনি। এ খবর লেখা পর্যন্ত রোববার রাত ৭ টা পর্যন্ত ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষনার প্রস্তুতি চলছে।

স/অ