রাজশাহীতে হচ্ছে বিকেএসপি

শাহিনুল আশিক:


খেলাধূলা নেশা থেকে এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। কয়েক দশক আগেও দেশে পেশাদার ক্রীড়াবিদ হওয়ার কথা কেউ ভাবত না। এখন ভাবে। কারণ ভালো খেলতে পারলে অর্থকড়ির সঙ্গে যশ-খ্যাতি। তাই অভিভাবকেরাও চান, খেলোয়াড় হোক সন্তান। তাই খেলোয়াড় তৈরির জন্য চাই উপযোগী উন্নত অবকাঠামো, সুন্দর পরিবেশ ও সঠিক গাইডলাইন।


সম্প্রতি রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্টেডিয়ামে মেয়েদের ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ও আর্চারী বিষয়ে বাছাই করে বিকেএসপি।

এক্ষেত্রে অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। বিকেএসপি থেকে বেরিয়েছে তারকা খ্যাত অনেক খেলোয়াড়। রাজশাহীর খেলোয়াড় ক্রিকেট মাতালেও এই বিভাগীয় শহরে নেই বিকেএসপি-এর শাখা। ফলে ভালো খেলোয়াড় হতে এই অঞ্চলের ছেলে-মেয়ের দিতে হয় দীর্ঘপথ পাড়ি সেই সাথে অর্থের বাহুল্যতা তো আছেই।

তবে রাজশাহী খেলাপ্রেমিদের আশার কথা জানালেন বিকেএসপির কর্মকর্তারা। সম্প্রতি রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্টেডিয়ামে মেয়েদের ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ও আর্চারী বিষয়ে বাছাই শেষ করলো বিকেএসপি।
এসময় একান্ত সাক্ষাতে বিকেএসপি উপপরিচালক উজ্জ্বল চক্রবর্তী জানান, প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াপ্রেমি। তিনি খেলাধূলা পছন্দ করেন। রাজশাহীবাসীর জন্য সুখবরটি হলো- বিকেএসপির জন্য জমি দেখা হয়েছে। বর্তমানে অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। রাজশাহীর সিটিহাটের পাশে অবায়ের মোড় এলাকায় জমি দেখা হয়েছে। বিকেএসপির কর্মকর্তাদের পছন্দ হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

জানা গেছে- বিকেএসপিতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, আর্চারি, সাঁতার, কারাতে, বক্সিং, জুডো, উশু, জিমন্যাস্টিকস, বাস্কেটবল, টেনিস, হকি, ভলিবল, তায়কোয়ান্দো, শুটিং ও টেবিল টেনিসসহ ১৭টি খেলায় আধুনিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে বিকেএসপিতে। বিকেএসপিতে দেশি কোচের পাশাপাশি বিদেশি কোচ দিয়ে টিচিং ব্যবস্থা থাকবে।

এই বিকেএসপি থেকে উঠে এসে বিশ্ব ক্রিকেট মাতাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ও বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও ছিলেন বিকেএসপির ছাত্র। শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলোয়াড় তৈরির কারখানা এখন বিকেএসপি। বিকেএসপি শুধু খেলোয়াড় তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিত পেলেও এর ব্যাপ্তি এখন অনেক বড়। কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে বেড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রীরা সামরিক বাহিনীতেও নিজেদের যোগ্যতার ছাপ রাখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, আধুনিক কোচ, বৈমানিক, মনোবিদসহ অন্যান্য সম্মানজনক পেশাতেও বিচরণ করছে বিকেএসপির ক্যাডেটরা।

বিকেএসপির ট্রেনিং পরিচালক কর্নেল একেএম মাজহারুল হক জানান, ২০১৫ সালের দিকে রাজশাহীতে বিকেএসপি স্থাপনের বিষয়টি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপরে জমি দেখা শুরু হয়। এখন জমি অধিগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি ২০২১ সালের জুনে কাজ শুরু হতে পারে।

বিকেএসপির চিফ কোচ ক্রিকেট মন্টু দত্ত জানান, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজশাহীতে বিকেএসপি আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিষয়ে কথা চলছে। তার অংশহিসেবে অনেক অগগ্রতি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ ছাড়া প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

মন্টু দত্ত আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে কাটাখালীর কাপাশিয়া মোজায় বাংলা-ট্রাকের পাশে একটি জায়গা দেখা হয়েছিল। সেটি ফসলি জমি হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যায় অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে রাজশাহীর সিটিহাটের পাশে অবায়ের মোড় এলাকায় জমি দেখা হয়েছে। বিকেএসপির কর্মকর্তাদের পছন্দ হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বিকেএসপির খেলোয়াড় বাছাই রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া থেকে গ্রামপুলিশ টিপু সুলতানের মেয়ে ফারজানাকে (১৫) নিয়ে এসেছেন। মেয়ে হকি খেলায় আগ্রহী। টিপু সুলতান জানান, মেয়ে ফারজানা হকি খেলা পছন্দ করে। খেলেও মোটামোটি। নাটোরে অনুশীলন করতো। খবর পেয়ে রাজশাহীতে নিয়ে এসেছি বিকেএসপির জন্য।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় শহর। সব বিভাগে বিকেএসপি থাকলে রাজশাহীতে নেই। বিভাগীয় শহরে বিকেএসপি থাকলে জেলা শহরের ছেলে-মেয়েরা খেলায় আগ্রহ বাড়বে। ফলে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য খেলোয়াড়দের অন্য বিভাগে যেতে হবে না। যারা ক্রীড়া ভালোবাসা তাদের মনে-প্রাণে দাবি রাজশাহীতে বিকেএসপি হোক।

রাজশাহীর ক্রীড়াবিদ ও বিকেএসপির টেনিস কোচ জাকির হোসেন জানান, বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের রাশীদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিকেএসপি হওয়া রাজশাহীবাসীর জন্য আর্শিবাদ। রাজশাহীতে অনেক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে বিকেএসপি হলে তারা সুযোগ পাবে।

স/আ