বিকাশে যেভাবে বদলে গিয়েছে অর্থনীতি

মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা  মানুষের কাছে ‘বিকাশ করা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পোশাককর্মী থেকে সাধারণ মানুষের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকাশ এখন একটি বিশ্বস্ত নাম। মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) প্ল্যাটফর্মটি শুধু আর্থিক লেনদেনেরই বাহন নয়, মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর্থিক সেবার বাইরে থাকা মানুষকে যুক্ত করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে বিপ্লবের সূচনা করেছে বিকাশ। এই পরিবর্তনের মিছিলে পরবর্তী সময়ে যুক্ত হয়েছে নগদ, রকেট, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, শিওরক্যাশসহ ১৫টির মতো কম্পানি এমএফএস সেবা দিচ্ছে।

২০১১ সালে বিকাশ এই সেবা চালু করার পর দেশে এখন করোনা মহামারি মোকাবেলায় এমএফএস সেবা অবকাঠামো বড় ভূমিকা রেখেছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার তাগিদেই গ্রাহকরা বিকাশের মতো সেবা ব্যবহার করে জরুরি প্রয়োজনীয় লেনদেন করছে। বাদাম বিক্রেতা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পেশাজীবী তার পাইকারকে বিকাশে টাকা দিতে পারছে তুলনামূলক কম খরচে। আগে যেখানে তাকে বাদামের আড়তে আসতেই ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, এখন সে মুহূর্তেই টাকা পাঠাতে পারছে। এভাবে একজন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বিকাশ। কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ, ইউটিলিটি বিল, ব্যাংক-বীমার কিস্তি পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা পরিশোধ, রেমিট্যান্স, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেও এখন বিকাশ একটি জনপ্রিয় নাম। বিদ্যুৎ বিল কিংবা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিয়েছে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস। ফলে সাপ্তাহিক ছুটিসহ দিনের যেকোনো সময় লেনদেন করতে পারছে মানুষ। এতে জনপ্রিয়তা বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের। একই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনও। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দিনে সাড়ে ৯৩ লাখ লেনদেন হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। অক্টোবরে লেনদেন হয়েছে ২৯০ কোটি ১৮ হাজার ৪২৩ বার, যেখানে টাকার পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ২৫৪ কোটি ৮৪ লাখ। আগের মাস সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ৪৯ হাজার ১২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে অক্টোবরে লেনদেন বেড়েছে ৮.৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ১৫টি ব্যাংক। বিকাশের চিফ এক্সটারনাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জীবনের পরিবর্তনে বিকাশের অবদানে আমরা গর্বিত। ফিন্যানশিয়াল খাতে আস্থা অর্জন করাই সবচেয়ে জরুরি। বিকাশ এই আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছে বলেই কভিড-১৯ চলাকালে দেশের মানুষ সহজে অর্থনৈতিক লেনদেন করতে পারছে। কভিড-১৯ সময়কালে ঈদের জাকাত প্রদান করতে বিকাশের ব্যবহার হয়েছে, দেশের মানুষের ঈদ উদযাপনের অংশ হতে পারা বিকাশের সাফল্যের একটি বড় অংশ।’

গবেষণায় দেখা গেছে, বিকাশ এর ব্যবহারকারীদের আয় বাড়াতে সহায়তা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অভিঘাত বা সংকটের সময় মানুষের আয় ও ব্যয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়নেও অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে বিকাশ। বিকাশ তার নানা উদ্ভাবনী সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নৈপুণ্য বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শুধু বিকাশের অবদান ০.৫ শতাংশ।

বিআইডিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষায়িত আর্থিক সেবায় বিকাশের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে চারটি বিষয়—বিনিয়োগের গুণগত মান, প্রযুক্তি, বিতরণ নেটওয়ার্ক ও কমপ্লায়েন্স। মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সেবা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ২৯টি লাইসেন্স দিয়েছে তার মধ্যে বিকাশই একমাত্র সাবসিডিয়ারি মডেল (ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি), যাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার আইনগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ বলেন, মানুষের কল্যাণে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস কতটুকু প্রভাব ফেলছে, তা অনুধাবনের জন্য খুব কম কাজ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিআইডিএস বাংলাদেশের প্রধান এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের ওপর একটি বড় গবেষণা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, পরিবারের কল্যাণ, বিশেষত আয়-ভোগের স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয় এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিকাশের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অগ্রগতি হলেও এখনো উল্লেখযোগ্য অংশ এর বাইরে আছে। জরিপে দেখা গেছে, ২৪ শতাংশ পরিবারের কোনো আর্থিক সেবার অ্যাকাউন্ট নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই গবেষণা বিকাশের কার্যক্রম ও প্রভাব সম্পর্কিত বেশ উৎসাহব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছে। বিকাশ ব্যবহারে এর গ্রাহকদের একদিকে আয় বেড়েছে, অন্যদিকে সঞ্চয় বেড়েছে। সামাজিক খাতে, যেমন—শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এবং বিশেষত নারীর ক্ষমতায়নে বিকাশ ব্যবহারের প্রভাব অত্যন্ত উৎসাহজনক।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ