বিকাশের কর্মকর্তাদের সাতক্ষীরায় এনে মাঝে মধ্যেই ফূর্তি করতো ফারুক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নিজেদের গচ্ছিত চার কোটি টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার দেড় হাজার বিকাশ এজেন্ট। সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ বিকাশ লেনদেনের দোকান বন্ধ। একই অবস্থা উপজেলাগুলোতেও। কি করবেন আর কি করা উচিত ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না বিকাশের এসব এজেন্ট।

তবে বিকাশের এজেন্টদের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত বিকাশ এজেন্টদের পক্ষে এজেন্টদের সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি শহরের আদর মোবাইল সেন্টারের কাজী আক্তার হোসেন মামলাটি করেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে বিকাশের সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজার, অফিস সহকারী, ডিস্ট্রিবিউটরসহ সাতজনকে। তবে এসব আসামির কাউকেই এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি সদর থানা পুলিশ।

মামলার আসামিরা হলেন- বিকাশের সাতক্ষীরা জেলা শাখার ম্যানেজার সজল কুমার, ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, রানা, ফারুক হোসেন, তার বাবা মতিয়ার রহমান, ভাই ইয়াছিন আরাফাত ও আফ্রিদী। ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেনের বাড়ি শহরের কাটিয়া এলাকায়।

এদিকে বিকাশ এজেন্টদের টাকা লুট করার ঘটনার মূলহোতা বিকাশের সাতক্ষীরা শাখার ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শহরের আদর মোবাইল সেন্টারের কাজী আক্তার হোসেন জানান, সাতক্ষীরা জেলার প্রায় দেড় হাজার এজেন্টের কাছ থেকে চার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি। ফারুক তার পরিচিতজনদের ফেসবুক ম্যাসেজের মাধ্যমে দুবাইয়ের ছবি সরবরাহ করছে। এটার মাধ্যমে বোঝা যায় চার কোটি টাকা লুটে নিয়ে সে এখন দুবাইয়ে পালিয়েছে। সোমবার থেকে তার কোনো হদিস নেই।

তিনি আরও জানান, ফারুক হোসেনের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তালাবদ্ধ। পরিবারের কেউই নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়েই হয়তো বা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে চতুর ফারুক। আমার প্রায় এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে। দোকানটিও বন্ধ করে রেখেছি। দোকান খুলে এখন কি করবো? থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছি; তবে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। কাউকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ।

শহরের টাউন বাজার এলাকার এক বিকাশের এজেন্ট (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ‘সাতক্ষীরায় বিকাশের নতুন করে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমি আবেদন করেছি। এছাড়া সাতক্ষীরার দেড় হাজার বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে চার কোটি নয় তারও বেশি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেন।

গত সোমবার বিকাশের হেড অফিস থেকে পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক। এজেন্টদের এ টাকা উত্তোলন করেই সে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিকাশের হেড অফিসের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জড়িত এ ঘটনায়। হেড অফিসের অনেক কর্মকর্তা সাতক্ষীরা আসতো বিভিন্ন সময়। শহরের মন্টুমিয়ার রিসোর্ট সেন্টারে নারী নিয়ে ফূর্তি করতো তারা। বিকাশের হেড অফিসের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে ছিল ফারুকের দহরম মহরম সম্পর্ক। সেই সুযোগও কাজে লাগিয়েছে ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক। এই ফারুক একসময় ভ্যান চালাতো। তারপর মোবাইলের মেমোরি কার্ড, চার্জার বিক্রি করতো। এরপর সে বিকাশের সাতক্ষীরার ডিস্ট্রিবিউটর হয়।

বিকাশের টাকা লুট ও মামলার ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলার পর এজেন্টদের টাকা উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেন টাকা নিয়ে কোথায় আছেন সেটির অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিকাশের কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। টাকা লুটের ঘটনায় বিকাশের খুলনার টেরিটরি ম্যানেজার (টিএম) বরখাস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে বিকাশের হেড অফিসের এক কর্তাকে (মিডিয়া) থেকে কল দেয়া হলে তিনি এক অনুষ্ঠানে আছেন এবং পরে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তবে সাতক্ষীরার বিষয়টি এবং অফিসের অন্য কারও নম্বর পাওয়া যাবে কি, এমন একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে ওই কর্তাকে। তবে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেও কোনো ফিরতি জবাব পাওয়া যায়নি।