বিএনপি পাহাড়ে ঢুকে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে: কাদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাদের জন্য বসে থাকা যাবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলটি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে রাজনীতির চোরাবালিতে আটকে আছে। তারা এখন পাহাড়ে ঢুকে পড়ে সেখানে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে-এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত তৃণমূলের বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিয়ে আওয়ামী লীগের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। নিজেরাই নিজেদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনীতির চোরাবালিতে আটকে আছে। তারা এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি এখন সবখানে ব্যর্থ। তাই তারা এখন কোটা সংস্কারে ঢুকে গেছে। পাহাড়ে ঢুকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে- এমন ইঙ্গিতও এখন পাওয়া যাচ্ছে।

নির্বাচন যথাসময়ে হবে উল্লেখ করে কাদের বলেন, এখন বিএনপির টার্গেট আওয়ামী লীগ নয়, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে তারা হটাতে চায়। বিএনপি তাদের সাত ধারা বাদ দিয়েছে রাতের আঁধারে কলমের খোঁচায়। যদি কেউ দণ্ডিত হয়, উন্মাদ হয়, দেউলিয়া হয় ও সামাজিকভাবে দুর্নীতিপরায়ণ এবং কুখ্যাত হয় তারা বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। কিন্তু তাদের দলের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দণ্ডিত। বিএনপি এখন আত্মস্বীকৃত দণ্ডিত দল। তারা পড়াশোনা না করেই রাজনীতি করে। মুখস্ত রাজনীতি করে। নিজেদের মধ্যে ওরিয়েন্টেশন নেই। শুধু বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা করলে হবে না, যা করতে হয় অকাট্য যুক্তি দিয়ে করতে হবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে জেতাতে নেতাকর্মীদের মাঠে নেমে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, হাতে সময় বেশি নেই। দলের অভ্যন্তরে যেসব সমস্যা আছে এক মাসের মধ্যে এসব সমস্যা দূর করতে হবে। দলে কোনো ভেদাভেদ থাকলে চলবে না। আগামী কোরবানি ঈদের আগে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোর কমিটি গঠন করতে হবে। পোলিং এজেন্ট ঠিক করতে হবে। এদের ট্রেনিং দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ঢাকায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়ে গেছে। দূরত্ব ঘুচিয়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে। নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সকালে শুরু হয়ে এ প্রতিনিধি সভা শেষ হয় বিকাল ৪টায়। বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই ছিলেন এক মঞ্চে। নেতারা ছাড়াও সভায় উপস্থিত থানা পর্যায়ের অনেক নেতা প্রাণ খুলে কথা বলেন।

সভায় বন্দরসহ বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার আহ্বান জানান নেতারা। একই সঙ্গে হাটহাজারী ও চান্দগাঁও সংসদীয় আসনটি পুনর্গঠনের ওপরও জোর দেন নেতারা। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও উঠে আসে অনেক নেতার বক্তব্যে।

বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। আমাদের দিল্লি সফরও চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে হয়নি। নওফেল, আমীন, বিপ্লব এ তিন চট্টগ্রামের সন্তান আমাদের প্রতিনিধিদলে ছিলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমসাময়িককালের জনপ্রিয় একজন বড় রাজনৈতিক নেতা। তার কাছ থেকে যেখানে ৫ মিনিট সময় পাওয়া কঠিন সেখানে তিনি আমাদের ৩২ মিনিট সময় দিয়েছেন। প্রাণ খুলে কথা বলেছেন। আমাদের মধ্যে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। সেটা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই আমরা সেসব বিষয়ে কথা বলিনি। নালিশ করিনি কারো বিরুদ্ধে। দেশকে অন্য কোনো দেশের কাছে বা রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে ছোট করিনি। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। অতীতে যেমন বাংলাদেশের পাশে ছিলেন রোহিঙ্গা ইস্যুতেও পাশে থাকার জন্য বলেছি। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য সুষ্ঠু বণ্ঠনের কথা বলেছি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার হাত দেশের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। ৭৫ সালের পর শেখ হাসিনার মতো সৎনেতা একজনও আসেনি। তার মতো সৎ, দক্ষ ও সফল একজন নেতাও জন্ম হয়নি দেশে। তিনি পৃথিবীর সেরা ১০ জন নেতার মধ্যে একজন, সমসাময়িককালে নেতাদের সফল একজন, পরিশ্রমী ও কর্মঠ নেতাদের মধ্যে একজন, পৃথিবীতে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারপ্রধানদের মধ্যে দুজনের একজন হচ্ছে শেখ হাসিনা। নারীর ক্ষমতায়নেও তিনি অনন্য।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হটানো যাবে না। তারা জানে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। তারা নয় বছরে ৯ মিনিটও সফল আন্দোলন করতে পারেনি। নয় মাসে আর কী করবে? বিএনপি ৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও করেছে। তাতে কি গণতন্ত্রের সূচি, সম্ভ্রম নষ্ট হয়েছে? তাদের কী লজ্জা নেই? তাদের আসলে লজ্জা শরমের বালাই নেই। বিএনপি এখন আবারও থ্রেড দিচ্ছে। তারা নাকি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি কিন্তু নির্বাচনে না এলে দেশের সংবিধান সংশোধন করা হবে না।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক।

তৃণমূলের বর্ধিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন, নগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বদিউল আলম প্রমুখ। সভায় সাংগঠনিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন অনেকে। যুগান্তর