আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছের ধর্না দিচ্ছে বিএনপি। এ ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে একটা কৌশলগত সমঝোতাও হতে পারে। এ কারণে বিএনপির নেতারা কৌশলে মিডিয়ায় বলার চেষ্টা করছেন, তাদের সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আর দু’একটি মিডিয়ায় এ বিষয়টি প্রকাশও হচ্ছে। বিএনপির আসল উদ্দেশ্য কৌশলে বিষয়টি মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া। সেই কৌশল নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা আরও জানান, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে এটা শুধু দুই একটি মিডিয়ায়ই বলা চেষ্টা হয়েছে। বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের অবস্থান আগের মতই রয়েছে। বিএনপি তরফ থেকে কখনোই বলা হয়নি জামায়াত তাদের মিত্র নয় বা জোটে নেই। অথবা জামায়াতও কখনো বলেনি বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই বা তারা ২০ দলীয় জোটে নেই। আসলে যতটুকু বলাবলি হচ্ছে সেটা মিডিয়াতেই। আর এটা বিএনপি-জামায়াতের কৌশলের অংশ হিসেবেই প্রচারে আনার চেষ্টা হচ্ছে। বাস্তবতার সঙ্গে বিষয়টির কোনো মিল নেই।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দেওয়ার পরও জামায়াতের প্রার্থী থাকা নিয়ে যে দূরত্ব তৈরির কথা বলা হচ্ছে সেখানে স্থানীয় কোনো হিসাব-নিকাশের বিষয় থাকতে পারে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপির প্রার্থীকেই জামায়াত সমর্থন দিয়ে গেছে। রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে জামায়াত জোরেশোরেই প্রচারে নেমেছে।
এদিকে সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জামায়াত দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে দলটির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে জামায়াত বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী দিতে পারে। অথবা বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে অন্য কোনো কৌশলে জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সেখানে আসন ভাগাভাগি বা দরকষাকষি আছে। সেই জায়গা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে। এর মানে এ নয় জামায়াত ও বিএনপির সম্পর্কের ফাটল তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারেক রহমান তো একবার বলেছিলো, ছাত্রদল-ছাত্রশিবির এক মায়ের পেটের দুই ভাই। এটাই হলো তাদের মূলকথা। মাঝে মধ্যে ছুটকা-ছাটকা কিছু নিউজ আসলে সেটাতে ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই যে তাদের সম্পর্ক থাকছে না, দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এসব হতে পারে একটা ধোঁয়াটে আবহাওয়া তৈরির জন্য। তাদের এতো দিনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভাঙার মতো কোনো ঘটনা তো বিএনপি ঘটায়নি। তাদের বিরোধী শক্তি যারা তারা যাতে ঢিল দেয়, বিভ্রান্তিতে পড়ে সেই ধুম্রজাল তৈরির জন্য এটা ছাড়ানো হতে পারে। পাতানো খেলা হতে পারে। জামায়াতও সরবে না বিএনপিও জামায়াতের হাত ছাড়বে না, আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো সখা…. তাদের পরিস্থিতিটা এমনই। বিএনপি-জামায়াত একই নীতি ধারণ করে চলে। একে অপরকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এক সংসারে অনেক সময় মান-অভিমান চলে। তাদের এক সংসার। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে হয় তো মান অভিমান চলতে পারে, কিন্তু সংসার ভাঙার কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপি-জামায়াত একে অপরের হরিহর আত্মা। তারা এতো হরিহর আত্মা তাদের মধ্যে কখনো বিচ্ছেদ হবে না। মান-অভিমান থাকলে আবার সব ঠিক হবে। তাদের জোট কখনো ভাঙবে, সম্পর্ক কখনো নষ্ট হবে না।