‘বায়োগ্যাসে মিটবে রান্না ও বিদ্যুতের সমস্যা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার গবাদি পশু ও মানুষের মল থেকে উৎপাদিত গ্যাস (বায়োগ্যাস) দিয়ে রান্না করা যাবে। শুধু রান্না নয়, মেটানো যাবে বিদ্যুতের ঝামেলাও। চলবে ফ্যান, লাইট, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রিক যন্ত্রও। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী কলেজে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় গিয়ে দেখা যায় ‘বায়োগ্যাস পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম’। যার মাধ্যমে এই সমস্ত কাজ করা যাবে।

উদ্ভাবক মোস্তাফিজুর রহমান সিল্কসিটিনিউজকে জানান, সাধারণত আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমস্যা রয়েছে। এর ফলে বেশি প্রভাব পড়ে গ্যাস ও বনের গাছপালার ওপরে। বনের গাছ কেটে করা হয় জ্বালানি। গ্যাস ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কাজে। এতে করে কমছে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশ।

তিনি বলেন, ছয়টি গরুর প্রাপ্ত গোবরের দ্বারা ১৭১ দশমিক ৬ ঘটফুট গ্যাস পাওয়া যায়। যার দ্বারা এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর চালানো সম্ভব। আর প্রতি কেজি গবাদি পশুর গোবর থেকে (৪৪- ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ ৬০-৭০ দশমিক) ২ দশমিক ছয় ঘন ফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব।

আর মানুষের এক কেজি মলে ২ দশমিক ছয় ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। যা তিন থেকে চারটি গবাদি পশুর মলের সমান। তাই গবাদি পশু ও মানুষের মল ব্যবহার করে বায়োগ্যাস পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম পরিচালনা করা হলে অর্থিকভাবে অনেকটাই লাভবান হবে সাধারণ মানুষ।

তিনি বলেন, মানুষের মল থেকে উদপাদিত বায়োগ্যাস হলে বেশি সুবিধা হবে। এর ফলে জ্বালানি ছাড়াও একটি কমপেশার দ্বারা গ্যাস রিজার্ভ করে ট্যাংকে রাখা যাবে। যা লোডশেডিঙের সময় জেনারেটার চালিয়ে বিদ্যুৎ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে, একটি ভবনে যতো বেশি জনসংখ্যা তাদের মল থেকে ততো বেশি বায়োগ্যাস উৎপাদন হবে। আর মানুষের মলের বায়োগ্যাস প্রক্রিয়াজাত করে রান্না করলে খরচ হবে ১৫ হাজার। আর বিদ্যুৎ সিস্টেমের জন্য ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে।

বায়োগ্যাস পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম সমন্ধে আরো তিনি বলেন, গবাদি পশুর মল দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্ল্যান্টের নির্মাণ খরচ হবে ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে একটি জেনারেটর, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, হিট এক্সেঞ্জার, বিভিন্ন ভাল্ব, কন্ট্রোলিং সিস্টেম, ওয়াটার পিউরিফিকেশন। আর মানুষের ক্ষেত্রে একই উপায়ে এর খরচ অনেকটাই কম পড়বে বলে তিনি জানান।

এর সুবিধাগুলো মধ্যে রয়েছে, উপাদানগুলো পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াবে না, গ্রামাীণ জীবনযাত্রায় আধুনিকতা আসবে, বায়োগ্যাসের বর্জ পরে সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করে বিশুদ্ধ খাবার পানি পাওয়া যাবে।

মেলায় বেড়াতে আসা আসরাফুল ইসলাম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, আমরা এই মেলা এসে সরকারি বিভিন্ন সেবা সমন্ধে জানতে পারছি। এছাড়া অনেক উদ্ভাবনী সমন্ধে জানতে পারলাম। তবে কলেজ মিলনায়তনে মেলা করার ফলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেকটাই কম।

এর আগে গত রোববার মেলায় স্থান পেয়েছে এরকম ৫৪টি স্টল নিয়ে শুরু পাঁচটি ক্যাটাগরিতে রাজশাহী কলেজের মিলনায়তনে শুরু হয় বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা।

বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় সকালের দিকে তেমন ভীড় না থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় মেলাস্থালের চিত্র। দর্শনার্থীতে ভরে যায় মেলাপ্রাঙ্গণ। মেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেকেই আসেন বিভিন্ন উদ্ভাবনী সমন্ধে জানতে। স্টলগুলো থেকে জানানো হয়েছে, সকালের দিকে দর্শনার্থী ভালোই ছিলো। দুপুরের দিকে কম থাকলে বিকেলের দিকে আবার মেলা প্রাঙ্গণ অনেকটাই ভীড় লক্ষ করা যায়।

 

স/আ