সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
নানা পদক্ষেপের পর কিছুটা কমেছে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা। এবার শীতকাল শুরুর আগেই এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) সূচকে বিশ্বের শীর্ষে উঠে যায় ঢাকা। দূষণ রোধে সড়কে পানি ছিটানোসহ নানামুখী তৎপরতা বেড়ে যায়। এর সুফলও হাতেনাতে মিলেছে।
মঙ্গল ও বুধবার দূষণের র্যাংকিংয়ে ঢাকার অবস্থান নেমে আসে কিছুটা ‘স্বস্তিকর’ পর্যায়ে। গত রোববার একিউআই সূচকে ঢাকা ছিল সবচেয়ে দূষিত নগরী। বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় একিউআই সূচকে ঢাকায় দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে। অবস্থান দাঁড়ায় ১০ নম্বরে।
তবে দূষণে নাকাল রাজধানীবাসী সাময়িক স্বস্তি অনুভব করলেও এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বায়ুদূষণের উৎসগুলো যতক্ষণ না আলোচনায় আসছে, ততক্ষণ টেকসই সুফল আশা করা যায় না। রাজধানীতে অবকাঠামো নির্মাণে অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ও ভাঙাচোরা যানবাহন, অপরিকল্পিত কলকারখানা এবং চারপাশে সহস্রাধিক ইটভাটায় নজরদারি জোরদার করার পরামর্শ তাদের।
দূষণরোধে গত সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও ছয়টি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার বায়ুদূষণ রোধে বেশকিছু নির্দেশনা দেন আদালত। দু’দিক থেকে নেওয়া পদক্ষেপের পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করেছে।
বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য খুবই ভয়াবহ উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। সম্প্রতি দেশের বাতাসে ক্ষতিকর এই উপাদানের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর সোমবার রাতেও পরিস্থিতি ছিল ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। সেদিন রাতে ঢাকার তিনটি এলাকা এবং মানিকগঞ্জে একিউআই তিনশ’ ছাড়িয়ে যায়; যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নেওয়া পদক্ষেপে পরদিন দূষণরোধে তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি ছিটানোসহ অন্যান্য উদ্যোগের ফল দেখা যায় এয়ার ভিজ্যুয়ালের সূচকেও। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একিউআই ছিল ১০৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২২। অবশ্য ২৪ ঘণ্টার গড় হিসাবে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ১৬১-তে; যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত।
চলতি মাসে বায়ুদূষণের দিক থেকে সবচেয়ে স্বস্তির দিন ছিল বুধবার। এ দিন একিউআই নেমে আসে একশ’র নিচে। দুপুর ২টায় একিউআই ছিল ৯৭; যাকে ‘মোটামুটি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ৯ ও ১০ নভেম্বর একশ’র নিচে ছিল একিউআই। নভেম্বরে অন্য সব দিনেই পরিস্থিতি খারাপ ছিল।
বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিন ঘুরে পানি ছিটানোর চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে দুই বেলা পানি ছিটানো হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে আব্দুল গণি রোড, কাকরাইল রোড, হেয়ার রোড, মগবাজার রোড, টয়েনবি সার্কুলার রোড, ডিআইটি রোড, এলিফ্যান্ট রোডসহ কয়েকটি সড়কে পানি ছিটানো হয়। বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় দফায় পানি ছিটানোর পর ওইসব এলাকায় জনজীবনে মোটামুটি স্বস্তি বিরাজ করে।
ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নাইন বলেন, আগে একবেলা করে পানি ছিটানো হতো। এখন দিনে দুই বেলা পানি ছিটানো হচ্ছে। বায়ুদূষণ রোধে সিটি করপোরেশন সজাগ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
এদিকে, আদালতের নির্দেশনার পর দূষণ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বুধবার বায়ুদূষণের দায়ে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে অভিযান পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বায়ুদূষণের দায়ে চলমান অভিযানে ঠিকাদারি দুই প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।