বাবা-ছেলে দুদলের রাজনীতি করতেই পারেন: মির্জা ফখরুল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি এক প্রার্থীর বাবা আওয়ামী লীগের নেতা। ওই বাবা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ছেলে ছাত্রদল করায় তার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে বাবা-ছেলে আলাদা আলাদা দলের রাজনীতি করতেই পারেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এ কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তার বাবা যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান। তার তিন ভাই যশোর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে তৃণমূলে অনেক আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে থাকতেই পারে যে বাবা একটা রাজনীতি করবেন, আমি একটা রাজনীতি করব। আমার ছাত্রজীবনে আমার বাবা একটা দলের রাজনীতি করতেন আর আমি একটা করতাম। কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। না বাবার হয়েছে, না আমার হয়েছে। এখন তো ছেলে বিপদে পড়ে যাচ্ছে, তার বাবা যদি আওয়ামী লীগ করে থাকে, তা হলে তার ছেলে বিএনপি বা ছাত্রদল করলে তার বিপদ হবে। আবার বাবার বিপদ হবে, তার ছেলে ছাত্রদল করলে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, ভিন্নমত পোষণ করা যাবে না।

সোমবার যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ছেলে ভিন্নমতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৫ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানেও শ্রাবণ অংশ নেননি। অথচ একটি মহল প্রচার করছে আমার পরিবারের বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ আছে।

লিখিত বক্তব্যে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমি জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পদক, কেশবপুর উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আমার পাঁচ ছেলে ও এক কন্যাসন্তান সবাই সাবালক-সাবালিকা।

তিনি বলেন, আমার জ্যেষ্ঠপুত্র কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে নৌকা মার্কায় সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দ্বিতীয় ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না কেশবপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। তৃতীয় ছেলে কাজী মাযাহারুল ইসলাম সোনা যশোর জেলা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। চতুর্থ ছেলে কাজী আযহারুল ইসলাম মানিক কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক।

কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কনিষ্ঠ ছেলে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে ভর্তি হয়। তখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলের সংগঠনে জড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ কমে আসে।

তিনি বলেন, বারবার আমি এবং আমার পরিবারের সবাই অনেক চেষ্টা করেও ছাত্রদল ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করাতে ব্যর্থ হয়েছি। এ জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করি। সেও আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না।

কাজী রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সঙ্গে শুধু বায়োলজিক্যাল রিলেশনশিপের কারণে একটি কুচক্রী মহল মিথ্যাচার করছে যে, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের যোগাযোগ আছে এবং আমার পরিবার বিএনপি করে। তারা এই অভিযোগ ঢাকা পর্যন্ত করে এসেছে। যারা আমার অতীত ও বর্তমান জানেন না, তাদের এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বিধায় আমি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা অবহিত করলাম।

যশোরের ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্তা, কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না, কাজী আযহারুল ইসলাম মানিক ও কেশবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী।