বাণিজ্য বন্ধ জাহাজশূন্য টেকনাফ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

সাড়ে তিন মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির শুরু হওয়া সংঘাতের ধাক্কা বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। নভেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ে ও দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মংডু থেকে কোনো হিমায়িত মাছ টেকনাফ বন্দরে আসেনি। এই সময়ে পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শুরু হওয়ায় মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়েও তেমন হৈহুল্লোড় শোনা যায়নি। তবে এই বন্দর দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় শূন্যের কোঠায় নামতে আর বাকি নেই।

টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার এ এস এম মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রতি মাসে আমাদের আমদানি-রপ্তানির কিছু লক্ষ্যমাত্রা থাকে। গত দুই মাসে আগের আমদানি করা পণ্য দিয়ে সেটা পুষিয়ে দেওয়া গেছে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। কারণ এখন আমদানি-রপ্তানি একেবারেই কমে গেছে।

বন্দর সূত্র জানায়, আমদানি-রপ্তানির শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে এ বন্দর থেকে গড়ে প্রতিদিন তিন কোটি টাকার মতো আয় হয়। সাধারণত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ পেঁয়াজ, আদা, রসুন, সুপারি, হিমায়িত মাছ এবং গাছ আমদানি করে থাকে। মৌসুম ভেদে আসে গরুও। এর বাইরে আচারের মতো কিছু অপ্রচলিত পণ্যও আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য ও ওষুধের মতো পণ্য রপ্তানি হয়। পণ্য আমদানি-রপ্তানির ধারাবাহিকতা ভালো থাকায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৬৬ কোটি টাকা শুল্ক বাবদ আদায় হয়।

এরপর থেকে বাণিজ্যে ধস নামতে শুরু করে। এর মধ্যে হঠাৎ করে জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত পরিমাণ সুপারি আমদানি হওয়ায় শুল্ক হিসেবে ৩৭ কোটি টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু তার আগের মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে মাত্র ৬ কোটি টাকা আদায় হয়। এর আগে অক্টোবর ও নভেম্বরেও প্রায় দেড় মাস টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। তাতে সরকার প্রত্যাশিত দেড়শ কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায়। বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের দলনেতা আলী আজগর মাঝি বলেন, আগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ লোক এই বন্দরে কাজ করতেন। মিয়ানমারে গণ্ডগোল শুরুর পর তাদের আর কাজ এখানে নেই, কারণ বাণিজ্য বন্ধ। এখন আমাদের সংসার চলছে না।

টেকনাফ বন্দরের সঙ্গে মূলত রাখাইন রাজ্যের সিটুয়ে এবং মংডু বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। আন্তর্জাতিক খবর অনুযায়ী এরই মধ্যে আরাকান আর্মি মংডুর বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকাও এখন আরাকান আর্মির দখলে। সিটুয়ে শহরের কেন্দ্রে এখনো সেনাবাহিনীর অবস্থান থাকলেও মফস্বল এলাকায় প্রভাব বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি। সব মিলিয়ে রাখাইন রাজ্যে সরবরাহ লাইনও ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইন থেকে তাদের দেশের নাগরিকদের চলে যেতে বলেছে। আরাকান আর্মির এই অবস্থানের মধ্যে নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য এখন পুরোপুরিই বন্ধ।

মিয়ানমার থেকে আসা হিমায়িত মাছের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরের ফিশারিঘাটের পিন্টু বড়ুয়া। তিনি বলেন, গত সাড়ে তিন মাস ধরে টেকনাফ দিয়ে এই মাছের সরবরাহ বন্ধ। বিকল্প হিসেবে ইয়াঙ্গুন থেকে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দর ঘুরে মাছ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সেই মাছে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, দেশটির বিভিন্ন জায়গায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। সন্ধ্যা নামার আগেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাখাইনের সিটুয়ে অন্ধকার নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানিতে।

টেকনাফ কাস্টমস সূত্র জানায়, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বন্দরের জেটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কোনো কার্গো ট্রলার বা জাহাজ সেখানে নেই।