বাজেটে সিনিয়র সিটিজেন নিয়ে ভাবা দরকার-হাসান আজিজুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তিনি বলেছেন, ‘বাজেটে দেশের সিনিয়র সিটিজেন নিয়ে ভাবা দরকার।

একটা সভ্য দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আলাদাভাবে দেওয়া হয়। কিন্তু এ দেশে এসব কিছু নেই। তার ওপর যদি এমনভাবে কর ধরা হয়, তাহলে মনে হয় নিরুপায় মানুষদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ যাঁরা পেনশন পান, পেনশনের টাকা জমান, সঞ্চয়পত্র রেখে দেন তাঁদের করের আওতার বাইরে রাখা উচিত। ’ গতকাল রবিবার এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।

হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘প্রতিবছরই দেশের নিয়ম অনুযায়ী বাজেট প্রস্তুত করতে হয়, তা না হলে রাষ্ট্র চলবেই না। এবারও সে রকম বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাজেট বিশেষজ্ঞ যাঁরা, তাঁরা নানা রকমের কথা বলছেন। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা বাজেট সম্পর্কে তেমন বুঝি না। আর এটা সাধারণভাবেই চিন্তা করি। নিজেদের আয়-রোজগার নিয়ে যাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, এর মধ্যে যাঁরা বাতিল মানুষ অর্থাৎ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে শেষ পর্যন্ত অবসর পেয়েছেন, তাঁরা তো পৃথিবীর ভার হয়ে আছেন। কেউ ইচ্ছা করলেও সেটা এড়াতে পারবেন না। ’

প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রীও যথেষ্ট বয়স্ক মানুষ। তিনি যেসব কর এখানে-ওখানে আরোপ করেছেন, সেসব নিয়ে অনেকেই বলছেন। আমাদের ছোট শিল্প, বড় শিল্প, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বাইরের বিভিন্ন পণ্যের মূল্যসহ নানা পণ্যের মূল্যের কথা বলেছেন। কিন্তু একটা অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করছি, এখানে যাঁরা একেবারেই অবসরগ্রহণকারী মানুষ, যাঁদের জীবন-জীবিকা বলতে কিছু নেই, যাঁরা হয়তো সামান্য সঞ্চয়পত্র অথবা অন্য কোনোভাবে পেনশনে পাওয়া এককালীন টাকা একসঙ্গে তুলে নিয়ে এদিকে-ওদিকে কিছু করেন। বলতে গেলে এটা থেকেই তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আমার মনে হয়, তাঁদের ওপর একটা চাপ আসছে। আমাদের মতো যাঁরা সঞ্চয়পত্রে ১২ শতাংশের মতো সুদ পাচ্ছিলেন, সেটা একেবারে ৬ কিংবা ৫-এ নামিয়ে আনা হবে। এটাই যদি হয়, তবে নাগরিক শ্রেণির একটা অংশের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়বে। ’

হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রটা একটা কল্যাণকামী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের জন্য এটা উপকারের নয়। সে জন্য আমরা আশা করব, মাননীয় অর্থমনন্ত্রী যেসব কর আরোপ করছেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গে যে কথাগুলো ব্যবহার করছেন, সেই সঙ্গে তিনি মনেও করছেন যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট এবার দিয়েছেন; সে ক্ষেত্রে ছোটখাটো বিবেচনাগুলো করা উচিত। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, সামাজিক উপার্জন-অক্ষম মানুষকে যদি কিছুটা সুবিধার আওতার মধ্যে আনতে পারা যায়, যদি সিনিয়র সিটিজেন করা যায়, তাহলে যাঁরা ইতিমধ্যে অবসরজীবন যাপন করছেন, তাঁদের অবসরজীবনের সামান্য যে অর্থটা তাঁরা পান সেটার ওপর হস্তক্ষেপ না করলে জীবনের বাকি দিনগুলো অনেকটা স্বস্তিতে কাটাতে পারবেন। সে জন্য মনে হয় এসব নিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ আমরা অর্থমন্ত্রীকে করতে পারি। ’

স/আর