বাঙালির ঐতিহ্য রুপালি ইলিশ

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ২০১৭ সালে ইলিশ মাছ বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাগর ও নদী দুই জায়গাই ইলিশের বিচরণক্ষেত্র। ইলিশ পছন্দ করে না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন।

ইলিশ মাছ স্বাদে ও গুণে অতুলনীয়। শর্ষে ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ ভাজা, ভাপা ইলিশ, স্মোকড ইলিশ, ইলিশের মালাইকারী- এমন নানা পদের খাবার বাঙালির প্রিয়।

কয়েক বছর আগে ইলিশের উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে মা ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাছে-ভাতে বাঙালি যেন তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। মাছের বাজারে গেলেই চোখে পড়ে বড় বড় রুপালি ইলিশ।

ইলিশ শুধু স্বাদেই অতুলনীয় নয়, পুষ্টির দিক থেকেও এটি একটি উপকারী মাছ। ইলিশে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ও ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। ইলিশ মাছ আকারে যত বড় হয, তার স্বাদ হয় তত বেশি।

বড় আকারের ইলিশকে অনেকে পাকা ইলিশ বলে অভিহিত করে থাকে। সমুদ্র থেকে ইলিশ নদীতে ঢোকার পর নদীর উজানে মানে স্রোতের বিপরীতে যখন চলে, সে সময় এদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হয়। এই তেলের জন্যই ইলিশের স্বাদ অনন্য হয়। বর্ষাকালে ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে বেশি হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের প্রাচুর্য দেখে মনে হয় এ মাছের সুদিন আবার ফিরে এসেছে। এখন দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশও বাজারে দেখা যায়, আগে যা ছিল স্বপ্নের মতো। ওয়ার্ল্ড ফিশ সংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী ও সাগর থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়। ইলিশ উৎপাদনের হিসাবে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার স্থান সবার শীর্ষে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ জেলায় মোট ইলিশ আহরণ হয় ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বরগুনা।

গত অর্থবছরে এ জেলা থেকে আহরিত ইলিশের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম মূলত দুটি- সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (ভাদ্র মাস থেকে মধ্য কার্তিক) এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি (মধ্য পৌষ থেকে মধ্য ফাল্গুন)।

তবে দ্বিতীয় মৌসুমের তুলনায় প্রথম মৌসুমে প্রজনন হার বেশি। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের উৎপাদনও বাড়ে।

তাছাড়া বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তাহলে প্রতি বছরই ইলিশ মাছ সহজলভ্য হবে। এজন্য মাঠ প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির পাশাপাশি কঠোর নজরদারি যেমন দরকার, তেমনি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জেলেদের সচেতন হওয়াও জরুরি।

মো. জিল্লুর রহমান : ব্যাংকার

zrbbbp@gmail.com

 

সুত্রঃ যুগান্তর