বাঘায় ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক ঈদ মেলার প্রস্তুতি চলছে

আমানুল হক আমান, বাঘা:
৫০০ বছরের ঐতিহাসিক ঈদ মেলার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী আকর্ষণ ঈদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পল্লী এই মেলা। মেলায় দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন পরসা নিয়ে বসতে শুরু করেছে। মেলার আয়োজন করা হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহৎ এক পুরুষ আব্বাসী। তাঁর বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরপে শাহদৌলা (রঃ) ও ছেলে হযরত আবদুল হামিদ দানিশ মন্দ (রঃ) এর উরশকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন থেকে বাঘা ওয়াকফ এষ্টেটের বিশাল এলাকা জুড়ে শুরু হয় এই মেলা। ঈদের তৃতীয় দিন ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। এই ওরশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ তবারকে অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়া ঈদের তৃতীয় দিনে জোহর নামাজের পর তবারক বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। রাজশাহী বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোনে বাঘায় হযরত শাহদৌলা (রঃ) ও ছেলে হযরত আবদুল হামিদ দানিশ মন্দ (রঃ) সাধনার পীঠস্থান।

বাঘা শাহী মসজিদের ভিতরে প্রবেশ পথের উত্তর গেটের বামদিকে হযরত শাহদৌলা (রঃ) রওজা শরীফ অবস্থিত। তিনি প্রায় ৫০০ বছর আগে বাগদাদ থেকে ৫ জন সংগীসহ ইসলাম প্রচারের জন্য পূর্ব-দক্ষিণ কোনে পদ্মা নদীর কাছে বাঘা নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। তারপর নিজের চরিত্র, মাধুর্য্য, ব্যবহার ও আত্মিক শক্তির বলে এই এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে আকৃষ্ঠ করেন তিনি। এই এলাকার মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর আত্মিক ক্ষমতার প্রভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন শত শত মানুষ। তাঁর স্বরণে প্রায় ৫০০ বছর যাবত চলছে ঈদ এই মেলা।

মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে চলে সার্কাস, যাত্রা, নাগর দোলা, মটোরসাইকেল, কারগাড়ি ঘোরান খেলা। এছাড়া পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরশ অনুষ্ঠান। সারারাত ধরে চলে ভক্তদের জিকির আজগার, সামা কাওয়ালী। পাপ মোচনের জন্য পুণ্য লাভের আশায় দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ আসে ঈদুল ফিতরের নামায আদায় করতে ও পবিত্র ওরশ মোবারকে। আগত নর-নারীরা ওরশ ও নামাযে যোগ দিতে শাহী মসজিদ ও খানকা বাড়ির পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক বিশাল দিঘিতে গোসল করে নিজেদেরকে পবিত্র করে। জনশ্রুতি রয়েছে দিঘির পানিতে গোসল ও পানি পান করলে আওলিয়াদের দোয়ার বরকতে নেক আশা পুরণ হয়।

দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আগতরা খানকা বাড়ির ভিতরে অস্থায়ী আশ্রয়ে, কেউ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় অবস্থান নেয়। মসজিদের উত্তর গেট থেকে শুরু করে খানকা বাড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ ভিক্ষুক দু’সারিতে খোলা আকাশের নিচে দিনরাত একই ভাবে বসে থাকে টাকা পয়সা রোজগারের আশায়। মনোবাসনা পুরণের জন্য অনেকে মান্নতের জন্যে নিয়ে আসে নগদ অর্থসহ চাল, ডাল, খাসি, মোরগ ইত্যাদি।

কর্তৃপক্ষ সব গ্রহণ করে ওরশ ও মাজার উন্নয়নের কাজে। পবিত্র ওরশ উপলক্ষে দুই সপ্তাহ ব্যাপী ধর্মীয় ঈদুল ফিতরের ঈদের এই মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ আসে মেলা দেখা ও আনন্দ উপাভোগ করার জন্য। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান উৎসব হলেও সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আসে এই মেলায়। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন রকমের পণ্য ব্যবসায়ী ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার দোকানী তাদের পসরা সাজিয়ে বসে মেলায় বেচাকেনা করার জন্য। গভীর রাত পর্যন্ত সকল পণ্যই বেচাকেনা হয়।

মেলাই পাওয়া যায় সব ধরনে মিষ্টি, বাচ্চাদের খেলনা, মনোহারি সামগ্রী, লোহা জাত দ্রব্য, কাঠের আলনা, চেয়ার, টেবিল, খাট, ড্রেসিং টেবিল, পালঙ্ক, সুকেচ, মাটির হাড়ি পাতিল, প্রসাধনী সামগ্রী, মাংস, বেকারী দ্রব্যাদি, শামুকের মালা, কাঠের সামগ্রী, বেলুন, বাঁশি এছাড়া ছবির দোকান, খাবার হোটেল, সদর ঘাটের পান, চা স্টল প্রভৃতি। 

মাজারের প্রধান গেটের দু-সারিতে বসে কসমেটিকসসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা জাতীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা। বাঁশ, বেত, স্টিল ও কাঠের তৈরী জিনিসের অপূর্ব সমারোহে বাঘার কলেজ মাঠ পরিপূর্ণ হয়। মাটির তৈরী ও লোহার ব্যবহার্য দ্রব্যাদিসহ বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী বিক্রেতারা বসে হযরত শাহশের আলী (রঃ) এর মাজারের চারপাশে। মৃৎ শিল্পীরা মেলায় নিয়ে আসে মাটির তৈরী বিচিত্রময় জিনিসপত্র। ঈদের নামায আদায়ের পর ঈদগা মাঠে বসে হরেক রকমের দোকান। বাঘা তেঁতুলতলা মাঠে সার্কাস, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় খেলা দেখানো হয়।

উলে¬øখ্য ১১ জুন বিভিন্ন রানৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিেিত মেলায় অশ্লীল কোন কিছু চলবেনা মর্মে ১১টি শর্তে ১৫ দিনের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। এলাকার ১২ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ২৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় বাঘা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমানকে ইজারা প্রদান করা হয়েছে।

মেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, সুষ্ট সুন্দর পরিবেশে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। যাতে কোন অপ্রীতিকর না ঘটে, সে জন্য পুলিশ বাহিনী সতর্ক থাকবেন।

স/আ