বাঘায় রোদে পুড়ে নষ্ট পাট-ভূট্টার ক্ষেত, লোকসানের মুখে চাষীরা


আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী):

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে ভরা বর্ষা মৌসুমে রোদের খরতাপে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাট ও ভূট্টার ক্ষেত। ইতিমধ্যে পাট পরিপক্কতা হয়েছে। বৃষ্টি পানি না হওয়ায় চাষিরা পাট কাটতে পারছেনা। রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে শত শত বিঘার পাট ও ভূট্টা। ফলে চাষিরা পড়েছেন বিপাকে।

রোববার (১৭ জুলাই) সরেজমিনে মুশিদপুর খেয়াঘাট পার হয়ে দেখা যায় পদ্মার চরের মধ্যে শত শত বিঘা জমিতে পাট রোপন করা হয়েছে। সেই পাটের জমির অধিকাংশ পাট রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চাষিরা কিছু কিছু জায়গায় পাট কেটে জমিতে রেখে দিয়েছেন। পাট জাগ দেওয়ার পানি পাচ্ছেননা। ফলে জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এদিকে ভূট্টার ক্ষেতের একই অবস্থা কালিদাসখালী চরের কামরুল ইসলাম ২০ বিঘা জমিতে ভূট্টার আবাদ করেছেন। তার অধিকাংশ জমির ভূট্টার আবাদ রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার বিঘা প্রতি প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার এই আবাদে খরচ উঠবেনা। একবার সেচ দিতে বিঘাপ্রতি খরচ হয় এক হাজার টাকা।
পাট চাষি কালিদাসখালী চরের আশরাফুল ইসলাম তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড খরতাপের কারণে পাটগাছ খর্বাকৃতির হয়ে আছে। জমির বেশির ভাগ পাটগাছ পুড়ে মরে যা”েছ। জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তার মতো শত শত চাষি এবার পাট চাষ করেছেন। কিš‘ খরায় সর্বনাশ হয়ে গেছে।

উপজেলায় ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে পদ্মার চরে ২ হাজার হেক্টর এবং চকরাজাপুর চরে এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উপজেলায় ভূট্টার আবাদ হয়েছে ১১৭ হেক্টর। এরমধ্যে পদ্মার চরে আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর। বছরে তিনবার ভূট্টার আবাদ হয়। বিঘাপ্রতি ভূট্টা ২৫-৩০ মণ উৎপাদন হয়।

এক বিঘা জমিতে ১০-১২ মণ পাট উৎপাদন হয়। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবার চাষিরা বেশি করে পাট চাষ করেছেন। কিš‘ খরার কারণে পাট যেমন পুড়ে নষ্ট হ”েছ, তেমনি পাট জাগ দেওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গর্ত ভাড়া করে পাট জাগ দিতে গেলে চাষিদের লাভ থাকবে না। এ জন্য এবার পাট চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে চকরাজাপুর উ”চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারনে আবাদ রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ মূহুর্তে বৃষ্টির দরকার। দুই/এক বৃষ্টি না হলে চাষিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এদিকে বৃষ্টি না হলেও পদ্মার পানি বাড়ছে। ফলে ব্যাপকভাবে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া কিছু বাড়ি, স্কুল, মসজিদ হুমকির মধ্যে রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় বৃষ্টি না থাকায় মাঠে রোপন করা পাট ও ভূট্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন পাটের জন্য জোরে বৃষ্টি দরকার। যাদের জমিতে পাট ভালো আছে, তারাও জাগ দেওয়ার পানি নিয়ে সংকটে পড়েছেন। সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে চাষিদের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে।

এস/আই