বাঘায় রোগাক্রান্ত পশুর মাংসের রমরমা ব্যবসা

আমানুল হক আমান:
কমদামে ক্রয় করা রোগাক্রান্ত পশু রাতের আঁধারে জবাই করে দিনের বেলায় তা সুস্থ সবল পশুর মাংস হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সহজ সরল ক্রেতারা ন্যায্য দামে এসব মাংস ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছে। আর এভাবে ক্রেতা ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছে অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, রোববার বাঘা উপজেলা সদর হাটে অসুস্থ একটি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেন স্থানীয় কয়েকজন মাংস ব্যবসায়ী। এই মাংস বিক্রির জন্য রাতে একটি গরু জবাই করেন স্থানীয় কসাইরা। বিষয়টি বাজার পাহারাদারদের নজরে এলে মাংস ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে সমাঝোতা করেন। এর আগে বাঘা মাজার গেটে মরা গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগে স্থানীয় দুই কসাই এর ভ্রাম্যমান আদালত ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তারপরও বিষয়টি থেমে নেই। মাংস কেনার ব্যাপারে ক্রেতাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চয় সৃষ্টি হয়েছে। কসাইরা সুযোগ বুঝে সুস্থ্য গরুর সাথে অসুস্থ্য গরু জবাই করে বিক্রি করেন। এভাবেই বাজারে বিক্রি হচ্ছে রোগাক্রান্ত গরু ও ছাগলের মাংস।

সাপ্তাহিক হাট বাজার ছাড়াও স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন জবাই করা হয় গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু। এরমধ্যে বেশিরভাগ পশু বাইরে থেকে জবাই করে বাজারে আনা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ব্যবসার সাথে অধিকাংশই মাংস ব্যবসায়ীরা জড়িত। কোনো পশু অসুস্থ হলে পশুর মালিক মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একটি পশুর আনুমানিক মূল্য ৫০ হাজার টাকা হলেও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কমমূল্যে ক্রয় করে মাংস ব্যবসায়ীরা। এই পশু জবাই করে বাজারে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে এর অধিকাংশই চলে যায় স্থানীয় খাবার হোটেলে। জবাই করা পশুর যেসব অংশ মানুষের খাবার অযোগ্য সেগুলো এখন আর বাদ দেয়া হয় না।

পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন মতে, পশু জবাইয়ের আগে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা কর্তৃক পশুটি জবাইয়ের উপযোগী বলে সনদপত্র থাকতে হবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে দেদারছে। বিধান লঙ্ঘন কারিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী, কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড, কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবার বিধান থাকলেও এ আইনের তোয়াক্কা করছেন না এসব মাংস ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দিনের বেলায় দ্রব্য মূল্যে নিয়ন্ত্রনে বাজার মনিটরিং এর সীমাবদ্ধ থাকলেও রাতের আধারে লুকিয়ে করা কাজগুলো রয়েছে অধরা। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে তা নিস্ক্রিয়। বিশেষ করে পৌর সভায় কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো বাজারে কসাইখানা থাকলেও যত্রতত্র পশু জবাই করে বাজারে মাংস নিয়ে আসা হয়।

মাংস ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম জানান, রোববার হাটে পায়ে আঘাত লাগা একটি গরু জবাই হয়। এই গরু রোগাক্রান্ত ছিলনা। মিথ্যা অভিযোগে মাংস ব্যবসায়ীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এছাড়া কসাইখানা থাকলেও এগুলো পরিস্কারের অভাবে পশু জবাইয়ের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন আব্দুল কাদির বলেন, প্রায় কসাইরা পশু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসেনা। নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অসুস্থ্য পশুর মাংস খেলে মানুষের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, বাজারে রোগাক্রান্ত গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস বিক্রি হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এই বিষয়ে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
স/শ