বাঘায় মৃত গোলাপি জীবিত: সেই উদ্ধারকৃত লাশকে স্ত্রী দাবি সুরুজের

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় ভুট্টাক্ষেত থেকে মুখে মবিল মাখানো উদ্ধারকৃত সেই লাশ দাফনের একদিন পর জীবিত পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন। আজ বুধবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে আড়ানী রেলস্টেশন থেকে জীবিত উদ্ধার করে প্রথমে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয়। পরে চেয়ারম্যান থানায় পাঠান। তবে চারঘাট উপজেলার চারাবটতলা এলাকার সুরজ মিয়া নামের এক যুবক ছবি দেখে দাবি করছেন, এ লাশ তার স্ত্রী দোলেনা বেগমের। তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, লাশটি আসলে কার?

জানা যায়, ১০ জুন সন্ধ্যায় বাঘা থানার পুলিশ চকবাউসা গ্রামের ভূট্টাক্ষেত থেকে মুখে পোড়া মবিল মাখানো অজ্ঞাত (৪৫)  এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। পরের দিন ১১ জুন ওই লাশের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। তিনি উপজেলার আড়ানী পৌরসভার পাঁচপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মনির হোসেনের স্ত্রী গোলাপি বেগম বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে আজ বুধবার সকাল ১০টায় আড়ানী রেল স্টেশন থেকে গোলাপি বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয়। সেখানে গোলাপি বেগমের মামা শাকিব হোসেন, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ভাসুর মাজদার রহমান, জা সাজেদা বেগম এর উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আসল গোলাপি বেগমকে সনাক্ত করা হয়। তার কাছে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে নামের মিল রয়েছে। পরে চেয়ারম্যান গোলাপি বেগমসহ উভয় পরিবারকে থানায় পাঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে গোলাপি বেগম বলেন, ঈদের আগে বুধবার (২৯ মে) রুস্তমপুর হাটে ৪২ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করি। এ টাকা নেয়ার জন্য শশুর বাড়ির লোকজন চাপ দিতে থাকে। আমি নিরুপায় হয়ে পরের দিন বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাজশাহীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। আমি ৬ বছরের সন্তান মারুফ হোসেন ও পেটের ৫ মাসের সন্তানের কথা ভেবে বুধবার সকালে রাজশাহী থেকে থেকে মহানন্দা ট্রেনে আড়ানী স্টেশনে আসি। এ সময় স্থানীয় কিছু মানুষ আমাকে চিনতে পেরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। সেখান থেকে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন এলাকাবাসীর প্রশ্ন, ওই অজ্ঞাত নারীর লাশটি কার? এরমধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে চারঘাট উপজেলার চারাবটতলা এলাকার সুরজ মিয়া নামের এক যুবক ছবি দেখে দাবি করছেন, এ লাশ তার স্ত্রী দোলেনা বেগমের।

লাশের দাবিদার দোলেনা বেগমের স্বামী সুরুজ মিয়া বলেন, ৯ জুন কাউবে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর করে পায়নি। এক মাধ্যমে জানতে পারি বাঘা থানায় একটি লাশ পাওয়া গেছে এবং দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পরে পুলিশের কাছে ছবি দেখে চিনতে পারি এবং এ লাশ আমার স্ত্রী দোলেনার।
গোলাপি বেগমের ভাসুর মাজদার রহমান বলেন, গোলাপি বেগম বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আমি বাদি হয়ে ১ জুন বাঘা থানায় সাধারণ ডাইরী (জিডি) করি। তার মুখে মবিল মাখানোর কারনে সঠিকভাবে লাশ চিনতে পারেনি।

গোলাপি বেগমের শশুর বিচ্ছাদ আলী বলেন, আমার ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় গোলাপি নিজের ইচ্ছা মতো চলাফেরা করে। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের বিভিন্ন কথা শুনে দেয়। ফলে আমরা দেখেও না দেখার ভান করে চলি। এরমধ্যে আমার ছেলে ও নাতীকে রেখে চলে গিয়েছিল। ১২ দিন পর তাকে জীবিত পাওয়া গেছে। তবে চকবাউসা গ্রামের লালু প্রামানিকের ভূট্টা ক্ষেতে যে লাশ পাওয়া যায়, সেটা অন্য কারো।
আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, গোলাপি বেগমসহ উভয় পক্ষ আমার কাছে আসলে, তাদেরকে থানায় প্রেরণ করেছি। তবে আত্মীয়-স্বজনের কাছে জেনে এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে মনে হয়েছে, সে আসল গোলাপি।
লাশের দাবিদার সুরুজ মিয়ার শশুর এসাহাক বলেন, বিয়ের পর থেকে জামাই মেয়ে আমার বাড়িতে আছে। তাদের মধ্যে কোন অমিল চোখে পড়ে। তবে সংসার করতে গেলে মাঝেমধ্যে দ-একটি কথা হয়। ৯ জুন থেকে মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করা হচ্ছিল। পরে জানতে পারি বাঘা এলাকায় একটি লাশ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে ছবি দেখে চিনতে পারি এ লাশ আমার মেয়ে দোলেনার।

এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসীন আলী জানান, উদ্ধারকৃত লাশটি ভুলভাবে তার আত্মীয়রা সনাক্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাফন করা হয়। এ বিষয়ে গোলাপির মামা শাকিব হোসেন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। উদ্ধারকৃত লাশের মুখ পোড়া মবিল দেয়া ছিল। তবে দুপুরে চারঘাট উপজেলার চারাবটতলা এলাকার সুরজ মিয়া নামের এক যুবক ছবি দেখে দাবি করছেন, ওই লাশ তার স্ত্রী দোলেনা বেগমের।

স/শা