বাঘায় ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই খাল খননের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই খাল খননের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। শনিবার সকালে উপজেলার ঢাকাচন্দ্রগাথী গ্রামে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় একদিনের জন্য খাল খনন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। অন্যদিকে আরেকটি খাল খনন বন্ধ না করে চলে যান। এতে ওই এলাকার জমির মালিকরা নিরুপায় হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, উপজেলার মোশিদপুর থেকে নওটিকা আরিফপুর পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত এ প্রকল্প সম্পূর্ণটা ধানী জমি। জমির মালিকদের দাবি, তাদেরকে কিছু না জানিয়ে এবং কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণ না করে প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে ও খাল খনন শুরু করেছে।

এ বিষয়ে চন্ডিপুর বড় ছয়ঘটি গ্রামের আশাদুল ইসলাম বলেন, আমার ৩২ কাঠা মাত্র জমি। এ জমিতে ধানের আবাদ করে কোন মতে সংসার চলে। এ জমিতে খাল খনন করা হলে না খেয়ে থাকতে হবে।

খাল খনন শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন নেতা-কর্মীর কাছে যান বেলগাছি গ্রামের রহিমা বেগম। কিন্তু তাদের কাছে গিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। তার মাত্র ১৮ কাঠা জমি। এ জমিতে চলতি মৌসুমে ১৮ মন ধান পেয়েছেন তিনি। এ ধান নিয়ে ও বিভিন্নস্থানে চেয়েচিন্তে কোন মতে সংসার চলে তার। ৪৮ বছর আগে তার স্বামী নুর মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। এ জমির ধার দিয়ে ৬টি মেহগনি গাছ ছিল। সেগুলো খাল খননকারীরা কেটে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।

কাগজ বুকে নিয়ে সারাদিন এ জমির উপরে বসে ছিলেন রহিমা বেগম। এখানে বসে আছেন কেন জানতে চাইলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি। এসময় জমি রক্ষার দাবি করেন তিনি।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এরকমভাবে চাকিপাড়া গ্রামের একরামুল হক, চন্ডিপুর বড়ছয়ঘটি গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, মুশিদপুর গ্রামের আফচার আলী, জামাল হোসেনে, ঝর্ণা খাতুন, জোৎস্না খাতুন, আনজেরা বেগম, আবুল কাশেম, রহিমা বেগম, মাজদার রহমান, আবদুল গনিসহ দুই শতাধিক জমির মালিক জমির কাগজপত্র নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। তারা ভূমি অধিগ্রহণ করে খাল খনন করার দাবি জানান।

প্রকল্পের স্থানীয় রক্ষণাবেক্ষক মহিউল হাসান টিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে পানি রাখা এবং বর্ষা মৌসুমে নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে সুপারিশ নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ ধানী জমি দাবি করে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

চাকিপাড়া গ্রামের এক একর ৩২ শতাংশ জমির মালিক একরামূল হক বলেন, আমাদের রের্কডকৃত ভোগ দখলীয় সম্পত্তি প্রায় ৩৫ বছর আগে জিয়া সরকারের সময় খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়। এ সময় সম্পত্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোয় তারা আমাদের এ সম্পত্তির উপর দিয়ে খান খনন করেনি। বর্তমানে আবার মন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশে নিয়ে যে খাল খনন কাজ শুরু করা হয়েছে এজন্য আমরা প্রায় ৩০ জন জমির মালিক জমি বাঁচাতে কোর্টে মামলা করেছি। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। তবুও তাদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিপরীতে কিছু সুবিধাবাদী লোকজনকে আর্থিকভাবে লাভবান করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ তার।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, খাল খননের বিষয়ে গ্যাঞ্জাম হচ্ছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একদিনের জন্য কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যটি বন্ধ না করে চলে আসলেন কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে গ্যাঞ্জাম হচ্ছে সেখানে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গিয়েছিলাম। অন্য জায়গায় সে পরিস্থিতি হয়নি। ফলে সেখানে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া যায় না। এছাড়া জমির মালিকদের একদিনের মধ্যে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর জন্য বলা হয়েছে।

রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খান জাফরুল মাহমুদ দেহেদী বলেন, এটি স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশকৃত অনুমোদিত প্রকল্প। এ প্রকল্প সার্ভে করার সুযোগ পায়নি। সুযোগ পেলে হয়তো এমন হতো না।

স/শা