সোমবার , ২৯ মে ২০১৭ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাঘায় বৃদ্ধ ও এতিমদের ইফতারে সাদা ভাত

Paris
মে ২৯, ২০১৭ ২:৫৯ অপরাহ্ণ

বাঘা প্রতিনিধি:
ওরা এতিম, এদের মধ্যে কারো বাবা নেই, কারো বা নেই মা, আবার অকালে অনেকেই হারিয়েছে বাবা-মা দুইজনকেই। একেক জনের জীবনের গল্প একেক রকম। এদের পরিবারের কোন খোঁজ নেই, এদের মধ্যে কেউ পরিত্যাক্ত আবার কেউ দূর্ভাগ্যক্রমে পরিবার বিছিন্ন মানুষ। এদের পরিবারও নেই, আনন্দও নেই। এতিমখানায় তাদের আসল ঠিকানা। ঈদ আসছে। তাই তারা পরিবারের সাথে ঈদ করতে চায়, আনন্দ করতে চায়, স্নেহ ভালোবাসার মধ্যে বেড়ে উঠতে চায়। সবাই বাড়ি যেতে চাইলেও বাড়িই তাদের এতিমখানা।

 
রাজশাহী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। এই গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি এতিম খানা। নাম দেয়া হয়েছে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন। বর্তমানে এতিমের সংখ্যা ১৬৯ জন। এতিমদের মধ্যে ছেলে ১১৮ জন ও মেয়ে ৫১ জন। এসব এতিম সন্তানরা কেউই তার নিজের নয়। ৩২ বছরে পৈতৃক ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করে এতিমদের রক্ষা করে চলেছে। এতে দেশের মানুষের ভালবাসা ছাড়া কি-ই-বা পেয়েছেন। পেয়েছে কেবল একটি খেতাব “সাদা মনের মানুষ” তাতে তো আর এতিমদের পেট ভরেনা। কিন্তু চলমান রমজান মাসে বেকায়দার রয়েছে এতিমদের নিয়ে। তিনি দেশবাসির কাছে আবেদন করেন এতিমদের বাচানোর জন্য।

সরেরহাটের এতিমখানার শিশুরা। ফাইল ফটো।

মাগফেরাতের এ মাসে ভালো ইফতার টুকুও জোটে না এসব এতিমদের। কোন দিন শুধু পানি মুখে দিয়ে ইফতার করে। নামাজ শেষ সাদা ভাত এর সাথে একটু সবজি দিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোররাতের কথা বলা বাহুল্য। একইভাবে চলছে। এসব জেনে অনেক সুহৃদয় ব্যক্তি সহযোগিতার কথা বললেও এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি কেউ। সহযোগিতা পেলে হয়ত এই রমজান মাসে ভালো কিছু দিয়ে ইফতার করতে পারতো এতিমরা। এতিমখানার সবাই রোজা রাখছে। কিন্তু শিশুদের ভালো খাবার জুটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে পরিচালক পড়েছেন বেকায়দায়। তাই তিনি বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

 
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার প্রথমে স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেন এতিম খানা। আয় বলতে মেহেরুন্নেসার সেলায় ফোঁড়া ও শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ।

 
এতিমদের রক্ষার্থে আশ্রয়হীনদের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ির ভিটা বিক্রি করে নিজেই পরিবার নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন। তিনি পল্লী চিকিৎসক পরিবার নিয়ে পড়েন বিপাকে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে উঠে আসেন এতিমখানায়। স্ত্রী মেহেরুন্নেসা শিশুদের দেখাশুনা ও তাদের জন্য রান্না করেন তিন সন্ধ্যা। এখন মেহেরুন্নেসা সেখানকার একজন সেবিকা। বিনিময়ে দুটো খেতে পান মাত্র।

 
বর্তমানে ১৬৯ জন এতিম ও ৩২ জন বৃদ্ধসহ তারা স্বামী-স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সবাই এক সাথে দিন রাত কাটান।
নিজের স্ত্রীর, ছেলে-মেয়ের, সরকাররি, বেসরকারি ও ব্যাক্তিগতভাবে যে, সহযোগিতা পায়, তা দিয়ে ছয় মাস চলে। আর ছয় মাস বিভিন্ন দোকানে বাঁকি রাখতে হয়। বছর শেষে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা ঋনের মধ্যে থাকতে হয়। সরকার ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা পেলে অন্তত এই ঋণ থেকে মুক্তি পেত। বর্তমানে ৫২ শতাংশ জমির উপর এতিম খানাটি উপজেলা সদর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে সরেরহাট গ্রামে অবস্থিত।
স/শ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর