মঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর ২০১৭ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাঘায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার: গ্রামে ফেরি করে বিক্রি

Paris
অক্টোবর ১৭, ২০১৭ ৩:২১ অপরাহ্ণ

আমানুল হক আমান:
রাজশাহীর বাঘার পদ্মায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে ইলিশ শিকার। এই মাছ ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়েও রক্ষা করতে পারছেনা।

পদ্মার চরের পলাশি ফতেপুর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আকতার হোসেন। পাশ দিয়ে ব্যাগের মধ্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিয়ে হাঁটছিলেন এক যুবক। তাৎক্ষনিক জিজ্ঞাসা করতেই পদ্মার টাটকা ইলিশ আছে বলে জানান যুবক। লোভ সামলাতে না পেরে দুই কেজি ইলিশ কিনে বাড়িতে ফিরেন ইঞ্জিনিয়ার আকতার। চায়ের দোকানে আড্ডায় বসে ইলিশ মাছ কেনার এই গল্প করছিলেন মঙ্গলবার। দামের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন চার’শ টাকা কেজি নিয়েছি।

আরেক গৃহবধু একটি ব্যাগে প্রায় ৫ কেজি মাছ নিয়ে অটো রিকসায় ফিরছিলেন স্বামীর বাড়ি। অটো রিকসা থেকে নামার পর জিজ্ঞাসা করে জানা গেল গৃহবধুর বাবার বাড়ি পিরোজপুর গ্রামে। পদ্মার ইলিশ নেওয়ার জন্য তার বাবা তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এই গ্রামের পদ্মা এলাকায় জেলেদের ধরা মাছ কিনে বাঘায় স্বামীর বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। প্রতি কেজি মাছ কিনেছেন সাড়ে তিন’শ টাকা দরে। অপরিচিত হওয়ায় তাঁর ব্যাগ খুলে ছবি তুলতে চাইলে বিব্রত হন তিনি।

আরেক ক্রেতা বাবু তার বন্ধু আসলাম উদ্দনীকে সঙ্গে নিয়ে রাওথা গ্রাম থেকে মাছ কিনেছেন চার’শ টাকা কেজি দরে। তার সাথে আলাপকালে প্রতিবেদককে বলেন, জাটকা ডিমওয়ালা মাছ রাওথা গ্রামের প্রায় বাড়িতে বাড়িতে। প্রথমে মাছ নাই বলে জানালেও ক্রেতা বলে আশ্বস্ত করার পর তাদের কাছে মাছ বিক্রি করেন।


মৎস্য অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ইলিশ নিধন চলছে উপজেলার পলাশি ফতেপুর, চকরাজাপুর, দিয়াড়কাদিরপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া আলাইপুর, মীরগঞ্জ এলাকায়। প্রতিদিন সুযোগ বুঝে পদ্মায় ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরে বিক্রি করছে। অভিযান পরিচালনার আগেই খবর পৌঁছে যাচ্ছে জেলেদের কাছে। ইলিশের হাট বসেছে পদ্মা নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে। কেউ ধরছেন, কেউ কিনছেন ইলিশ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাঘা প্রায় ১৫ থেকে ২০টি গ্রুপ মা ইলিশ ধরে বিক্রি হচ্ছে। দিনের চেয়ে রাতে ইলিশ শিকার হয় বেশি। বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে এক দফা নদীতে জাল ফেলে সন্ধ্যায় মাছ নিয়ে আসছে নদীর তীরে। রাতে আরেক দফা নদীতে জাল ফেলে সকালে মাছ নদীর তীরের ঝোপে-জঙ্গলে, কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। সুযোগ বুঝে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, বাইসাইকেল নিয়ে ব্যাগ করে নিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন আলাইপুর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমের দিকে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। স্থানীয় এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘এই তো দেখেন ইলিশ রক্ষার নমুনা। সেখান থেকে পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর হয়ে উপরে ফেরার পথে বেঙগাড়ি এলাকায় দেখা হয় এক মাছ বিক্রেতার সাথে। তার পাতিলে ছিল মা ইলিশ ও জাটকা।

ফেরি করে মাছ বিক্রেতা জাকির জানান, চকরাজাপুর এলাকার ঘাট থেকে মাছগুলো ক্রয় করা হয়েছে। মনিগ্রাম দক্ষিনপাড়ায় ফেরি করে ডিম ওয়ালা মা ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে আরেক বিক্রেতা রবিউল ইসলামকে। হাট বাজার ছেড়ে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, জেলেরা ধরছে আর আমরা ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে বিভিন্ন গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করছি। মাছগুলো আলাইপুর এলাকার ঘাট থেকে ক্রয় করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে দিঘা এলাকায় আরিফুর রহমান কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

পীরগাছা এলাকায় রাতে ডিমওয়ালা মাছ জাটকা বিক্রি করছিলেন এক ব্যবসায়ী। পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ঘাট থেকে কিনে বিক্রি করেন। এলাকার ঝর্না তার কাছ থেকে সাড়ে ৮ কেজি মাছ কিনেছেন পাঁচ’শ টাকা দরে। বাউসা হেদাতী পাড়ার আমেনা কিনেছেন সাড়ে ১০ কেজি। এই ব্যবসায়ী জাটকা ইলিশ বিক্রি করেন দুই’শ টাকা কেজি দরে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাট-বাজারে কোথাও ইলিশ বিক্রি হয় না। তবে চুরি করে কিছু অসাধু জেলে মাছ ধরে বিক্রি করছে এটা সত্যি। ১২টা অভিযান চালিয়ে ৪৩ কেজি ইলিশ ও ৬৮ হাজার মিটার জাল আটকসহ পাঁচটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একজনের বিরুদ্ধে মামলা ও আরেক জনের জরিমানা করা হয়েছে।
স/শ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর