বাঘায় দুর্গোৎসবে বেড়েছে ঢাকিদের কদর

আমানুল হক আমান, বাঘা:
দুর্গোৎসবে ঢাক ঢোল যারা বাজায়, সেই ঢাকিদের চাহিদা ও কদর উৎসব আসলে বাড়ে বলে জানান লিটন চন্দ্র দাস নামে এক ঢাকি। পূজা শুরুর কয়েক দিন আগ থেকে পূজামন্ডপে ঢাকিদের বাড়ি গিয়ে আমন্ত্রণ ও দরদাম করে মন্ডপে আনা হয়। রীতি অনুযায়ী উৎসবের আগে থেকে পঞ্চমি ও ষষ্ঠির দিন থেকে তিন সদস্যের দল রাত দিন ২৪ ঘন্টার জন্য মন্ডপে আসে। তাঁরা চুক্তি অনুযায়ী চার থেকে পাঁচ দিন ব্যাপী মন্ডপে থাকে মন্ডপে খায়।

ষষ্ঠি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। বিসর্জন হবে আগামী মঙ্গলবার। দুর্গাপূজার জন্য অর্থের বিনিময়ে মন্ডপ পরিচালনাকারীদের সঙ্গে ঢাকিরা চুক্তিবদ্ধ হয়। বাজনার তালে নাচ আর নানা ঢঙে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের মাধ্যমে পূজারিরদের নজর কাড়ার চেষ্টা করে ঢাকিরা। মন্ডপে ভিন্ন রকম উৎসবের আবহ তৈরি হয়। বাজনার শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। দলভিত্তিক আট হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ২০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকেন এ উপজেলার ঢাকিরা।

উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা ঋষিপাড়ায় গ্রামে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি ঢাকি দল আছে। তাঁরা পূজার সময়ে ঢাক ঢোল নিয়ে চুক্তিভিক্তিক বিভিন্ন পূজা মন্ডপে যায়। এসময় পার হলে কেউ নাপিতের কাজ, কেউ স্যান্ডেল সেলায়ের কাজ, আবার কেউ বেতের কাঠা-ঝাকা বিক্রির কাজে জড়িয়ে পড়ে।

গতকাল শুক্রবার পূর্বপাড়া মন্দ্রিরে ঢাকি লিটন চন্দ্র দাস বলেন, পূজার সময়ে মন্ডপে ঢাক বাজায়। অন্য সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজায়। এছাড়া এইসব কাজ না থাকলে সেলুনে চুল-দাঁড়ি কাটার কাজ করি। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। আড়ানী পূর্বপাড়া মন্দ্রিরে ১৩ হাজার টাকায় চুক্তিতে এসেছেন তিন সদস্যের লিটন চন্দ্র দাসের দল।

দিঘা ঋষিপাড়ায় গ্রামের আরেক ঢাকি সত্যেন কুমার দাস বলেন, গত দুই বছর আগে বড় মেয়েকে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে স্থানীয় স্থানীয় কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। এভাবে চলছে ২৫ বছর। এছাড়া আমি বিভিন্ন মন্দ্রিরে ২০ বছর যাবত ঢাক বাজিয়ে আসছি। আমার মতো আরো ১৫ থেকে ২০টি দল রয়েছে। তাঁরাও চুক্তিভিক্তিক বিভিন্ন মন্ডপে গেছে।

উপজেলা পূজা উদয্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রাম গোপাল শাহা বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় এবছর ৩৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। উপজেলার সিংহভাগ ঢাকিরা দিঘা ও আড়ানী এলাকা থেকে আনা হয়।

আড়ানী পূর্বপাড়া মন্দ্রিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূরহিত পবিত্র বাগচি বলেন, আমি শাজাদপুর ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করি। বাড়িও এই এলাকায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি পূরহিতের কাজ করি। আমি আট বছর থেকে একাজের সাথে জড়িত। এছাড়া আমার বাবা পেশাদার পূরহিত। বাবার পেশাকে গুরুত্ব দিয়ে আমিও একাজ করছি।

বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী মাহমুদ বলেন, ঢাকিদের ঢোলের বাজনায় পূজামন্ডপগুলো মুখরিত থাকে। এছাড়া পূজামন্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

স/আ