বাঘায় জমে উঠেছে খেজুর রস সংগ্রহ


বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায়  জমে উঠেছে খেজুরের রস সংগ্রহ।বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার আড়ানী পৌরসভার হামিদকুড়া গ্রামের ৭৮ বছরের খবির উদ্দিন নামের বৃদ্ধকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে উঠে হাড়ি বাধতে দেখা যায়।

জানা যায়, উপজেলায় দু’টি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ৩০ হাজার ৩৮৯ জন কৃষি পরিবার রয়েছে। বাগানসহ সড়কপথ, পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনা মিলে ৭৩ হাজার খেজুরগাছ আছে। একজন গাছি প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুর গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চার হাজার গাছি রস সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছে। প্রতি মৌসুমে তারা খেজুর গাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকানির্বাহ করেন।

জানা গেছে, একেকজন কৃষক তাদের গাছের সংখ্যা অনুপাতে গাছি নিয়োগ করেন। তারা মৌসুম জুড়ে রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত থাকেন। উপজেলার আমের যেমন দেশজুড়ে খ্যাতি, তেমনি সুমিষ্ট খেজুর গুড়ের খ্যাতিও রয়েছে। উপজেলায় গুড়ের প্রধান হাট বাঘা ও আড়ানী। এরপর রয়েছে মনিগ্রাম ও দিঘাসহ অন্যান্য হাট। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার বাঘারহাট বসে। এ হাটেই সবচেয়ে বেশি গুড় বেচাকেনা হয়। উপজেলার বাঘা ও আড়ানী পৌরসভা ছাড়াও বাজুবাঘা, গড়গড়ি, পাকুড়িয়া, মনিগ্রাম, বাউসা ও চকরাজাপুর ইউনিয়নের অন্যান্য হাটেও কম-বেশি গুড় বেচাকেনা হয়। তবে বেশি দাম পাওয়ার আশায় অনেকেই বাঘা ও আড়ানী হাটে গুড় বিক্রি করতে আসেন। বাঘারহাটে রোববার প্রতি কেজি খেজুর গুড় ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হয়। মৌসুমের একেবারে শুরুতে এ গুড়ের দাম প্রতি কেজি ১০৫-১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। প্রতি বছরই মৌসুমের শুরুতে বেশি দামে গুড় বিক্রি হলেও ভরা মৌসুমে দাম কিছুটা কমে যায়। তবে আর কিছুদিন পরই শুরু হবে ভরা মৌসুম।

এ বিষয়ে হামিদকুড়া গ্রামের বৃদ্ধ গাছি খবির উদ্দিন বলেন, আমার নিজস্ব ২০টি গাছ আছে। এই গাছ নিজে পরিচর্চা করি। আমার প্রতিদিন ৩-৪ কেজি গুড় হয়। সেগুলো আড়ানী হাটে বিক্রি করি। এছাড়া ছেলে-মেয়েদের দেয়া হয়। গায়ে শক্তি আছে, তাই এই কাজ গুলো করি। ছেলেরা নিষেধ করে। খালি খালি বসে থেকে কি করবো। নিজের কাজ নিজে করছি।

বাঘা বাজারের ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার এনামুল হক বলেন, পুরো শীত মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। তবে দেড় থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপক হারে গুড় বেচা কেনা শুরু হবে। শীত বেশি পড়লে গুড়ের উৎপাদন ভাল হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চলতি মৌসুমে মানুষ খেজুর গুড় থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় করবে। উপজেলার ৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭৩ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গুড় উৎপাদনে সহায়তা দেয়া হলে এই শিল্পকে আরো লাভজনক করা সম্ভব। ফলে বিদেশেও গুড় রফতানি করা যেতে পারে। এছাড়া এই গুড় থেকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব পাওয়া সম্ভব।

স/জে