বৃহস্পতিবার , ২৭ জুন ২০২৪ | ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাঘায় বাবুলের জানাজায় শাহরিয়ারের বক্তব্যে ক্ষোভ চরমে

Paris
জুন ২৭, ২০২৪ ৬:৫১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাঘায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে নিহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু জানাজায় স্থানীয় এমপি শাহরিয়ারের বক্তব্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকারকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনিল কুমারকে হাত ধরে টেনে তাঁকে বাবুলের লাশের পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অনিল কুমার সরকারের সঙ্গে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন পাশেই বাবুলের লাশ সামনে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম।

বাবুলের মৃত্যুর জন্য তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন; রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলুকে দোষারোপ করেন। শাহরিয়ারের এমন বক্তব্যে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাবুলের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। লাশ সামনে রেখে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খুনি আক্কাস (পৌর মেয়র), খুনি মেরাজ (ইউপি চেয়ারম্যান)। তাদের পেছনে মদদদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাস বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এস এম কামাল বলেছিলেন, সে বহিষ্কৃত। এই ঘোষণার সাত দিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাস ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে।’

শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা জবাব চাই, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলুর কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক? খুনের মামলায় দুজন সশরীর উপস্থিত ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এএইচএম খায়রুজ্জামান এবং লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমাদেরও দায়িত্ব আছে।’

শাহরিয়ার আলম যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। শাহরিয়ারের ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার। তাকে হাত ধরে টেনে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে সভাপতি অনিল কুমারের মতবিরোধ রয়েছে।

অনিল কুমার সরকার অভিযোগ করেছেন, তাঁকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করে জানাজার স্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহত বাবুলকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি ফুলের ডালাও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটিও মরদেহে দিতে দেওয়া হয়নি। অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘আমাকে দেখে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ মোল্লা অপমানজনক কথা বলেন। আমাকে বলা হয়, “আপনি এখানে কেন? আপনি বেরিয়ে যান।”

এরপর পুঠিয়া উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি রাজিবুল হক হাত ধরে টেনে আমাকে সেখান থেকে বের করে দেয়।’

অনিল বলেন, ‘দলের একজন নেতা মারা গেছেন, আমি গিয়েছি। সেখান থেকে বের করে দেওয়া শোভনীয় নয়। বিষয়টি আমি দলকে জানাব। দলের সভানেত্রী নিশ্চয় এর বিচার করবেন।’

জানাজায় শাহরিয়ার আলমের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বাবুল ত্যাগী নেতা। আমার হাতেই তৈরি। আহত হওয়ার পর থেকেই সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছি। হাসপাতালে গিয়েছি। তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে দুঃখজনক। তাঁর খুনের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, সবার বিচার হওয়া উচিত। এটা আগেও বলেছি, এখনও বলছি। সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম আমাদের মদদাতা হিসেবে উল্লেখ করে সাতদিনের কলরেকর্ড তুলতে বলেছেন। আমি ডিআইজি-এসপিকে ফোন করে বলেছি, সাতদিন না, সাত মাসের কল রেকর্ড তুলে দেখেন।’

আসাদ বলেন, ‘এ মামলার যারা আসামি তারাও দলের জন্য ত্যাগী। কিন্তু বাবুল হত্যার বাদী হলো হাইব্রীড আওয়ামী লীগ। সব বাদ দিয়ে হাইব্রীড কেন বাদী? শাহরিয়ার সাহেব যা বলেছেন, তা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে তা না হলে তাকেও মামলার মুখোমুখি হতে হবে। এটা তার স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা। সে তো তৃণমূল থেকে উঠে আসা মানুষ না। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরিতে অতীতেও সে ভাল অবদান রেখেছে, এখনও রাখছে।’

শাহরিয়ারের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই তাকে আমি পাশে পেয়েছি। তাঁকে হত্যার মতো নিন্দনীয়-নৃসংশ হত্যার সঙ্গে আমি কোনভাবে জড়িত থাকার কোন কারণ নেই, কোন সুযোগ নেই। জানাযায় আমার নাম ধরে এলাকার বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্শাপরায়ণভাবে এ রকম উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তাঁর কাছ থেকে এটা আশাই করিনি। কী উদ্দেশ্যে, কেন তিনি বলেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন। যারা বিবেকসম্পন্ন মানুষ তারা এটাকে সমর্থন করবেন না।’

লিটন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমার বয়স এখন ষাটের ওপরে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের ঘটনায় মদদ দেওয়ার ইতিহাস নেই্ মনে হচ্ছে যেন লাশটি কারও দরকার ছিল। একজনের মৃতদেহ দরকার ছিল যেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করা যায় এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে। আমরা যারা আওয়ামী লীগের রক্ত নিয়ে বড় হয়েছি, তাদেরকেই এখন হেনস্থা করার অপচেষ্টা করছেন নতুনেরা।’

গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুত্বর আহত হন বাবুল। বুধবার বিকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ সংঘর্ষের নেপথ্যে ছিল বাঘা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির বাড়তি টাকা আদায়কে সমর্থন দেওযা বা না দেওয়া।

সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের পছন্দ অনুযায়ীই বাঘায় দলিল লেখক সমিতির কমিটি গঠিত হয়। নিজেরা দলিল লেখা না জানলেও দলীয় নেতারা এই সংগঠনের নেতৃত্বে বসে জমি কেনাবেচার সময় ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন।

এর প্রতিবাদে গত ২০ জুন দলিল লেখকদেরই একাংশ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এই মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু; পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী এবং পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম।

পরে ২২ জুন দলিল লেখক সমিতির দৌরাত্ম বন্ধের দাবিতে বাঘা উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে লাভলু, আক্কাস ও মেরাজুলের সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেয় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচির জন্য দুপক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা উপজেলা চত্বরে জড়ো হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুপক্ষের অর্ধতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। গুরুত্বর আহত বাবুল মারা যান। তিনি আক্কাসের বিরুদ্ধে আয়োজন করা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের পর দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়। সেই মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপ নেবে। এ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুলসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সাত আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছিল। বৃহস্পতিবার আদালত আসামিদের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর