বাগাতিপাড়ায় ৩৫ বছর পর চেয়ার ছাড়লেন বিএনপি’র হাফিজুর

বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি:
ইউপি নির্বাচনে পরপর ৬ বার বিজয়ী হয়ে টানা ৩০ বছর ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে একই চেয়ারে ছিলেন। এরপর চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আরও ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। টানা ৩৫ বছর পর গত ৩০ এপ্রিল চেয়ার ছাড়লেন সদ্য বিদায়ী নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান।

বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের কারনে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্বের লড়াইয়ে এবার অংশ নেননি তিনি। হাফিজুর রহমান বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক।

নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অহিদুল ইসলাম গকুল দায়িত্বভার গ্রহন করলে টানা ৭ বারের বিজয়ী চেয়ারম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে বিএনপি’র উপজেলা পর্যায়ের এই শীর্ষ নেতার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাফিজুর রহমান ১৯৮৩ সালে বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হন। এরপর কর্মদক্ষতা আর জনগনের ভালবাসায় পর পর ৬ বার একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি প্রথমে ওয়াকার্সপার্টির রাজনীতির সংগে যুক্ত ছিলেন। পরে ২০০৫ সালে বিএনপির চেয়ারপারসোনের উপদেষ্টা প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন।

ব্যাপক পরিচিতি এবং জনপ্রিয় হাফিজুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি জামনগর ইউনিয়ন থেকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-৯৯ তে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রমে রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ এবং বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০০১-এ অব্যাহত উন্নয়নে নারীর মর্যাদা ও উন্নত পরিবেশ কার্যক্রমে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে নাটোর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সরকারি খরচে দীর্ঘ একমাস চীনদেশ সফর করেন।

হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও নম্র স্বভাবের হাফিজুর রহমান বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীর সবুজ বৃক্ষরাজির ছাঁয়ায় ঘেরা কৈপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা মৃত দেল মোহম্মাদ। মায়ের নাম মৃত হামিদা খাতুন। তাঁর জন্ম ১৯৬০ সালের ৭ জুলাই। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি ৩ কন্যা সন্তানের জনক। কৈপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা শেষে নাটোর নবাব সিরাজ উদ-দোলা কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৮১ সালে তিনি বিএ পাস করেন ।

উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণের জন্য আমরা রাজনীতি করি। তাই ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হাফিজুর রহমান দলের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করেছেন। তিনি এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি যদি বিএনপি থেকে অংশ নিতেন তবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। তিনি একজন দক্ষ স্থানীয় রাজনীতিবিদ।

এ ব্যাপারে বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘জনগণের ভালবাসায় দীর্ঘ সময় আমি জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি। চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়ারে না থাকলেও জীবনের বাাঁকি দিনগুলোও মানুষের সেবায় কাজ করতে চাই। তাছাড়া চেয়ারম্যান নির্বাচনের পূর্বেও আমি সমাজসেবামুলক কর্মকান্ডের মধ্যেই ছিলাম।

বর্তমানে বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমি আমার রাজনৈতিক কর্মকান্ড সুচারুরূপে পালন করে যেতে চাই।’

বিএনপি পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আবারও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের কারনেই এবার নির্বাচনে অংশ নিইনি। তবে দল কখনও যদি আবারও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সাধারন মানুষ চাইলে এবং দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে চাই’।

স/অ