বাগাতিপাড়ায় ‘সততা স্টোর’: দোকানি ছাড়াই চলবে দোকান

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:
নেই কোনো দোকানি, নেই নজরদারি ক্যামেরা। জিনিসপত্রের গায়ে দাম লেখা রয়েছে। সেই দাম অনুযায়ী খাতা-কলম বা অন্য কোনো শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে নির্ধারিত বাক্সে রাখতে হবে টাকা । এভাবে কোনো দরদাম ছাড়াই শিক্ষার্থীরা কেনাকাটা করতে পারবে ‘সততা স্টোর’ থেকে। এই দোকান থেকে শিক্ষার্থীরা যেমন সহজে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারবে, তেমনি রাখতে পারবে সততার স্বাক্ষর।

নাটোরের বাগাতিপাড়ার তমালতলা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সততা অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ওই স্কুলের একটি কক্ষে উপজেলার প্রথম ‘সততা স্টোর’ নামে এমন ব্যতিক্রমী দোকানের উদ্ভোদন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ প্রধান অতিথি থেকে ওই দোকানের উদ্বোধন করেন। এসময় সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আঃ কাদের এর সভাপতিত্বে এবং প্রধান শিক্ষক খন্দকার মোখলেছুর রহমানের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভ’মি) আহসান হাবিব জিতু, উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক ও প্রেস ক্লাব সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, প্রেস ক্লাব সাধারন সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মাসুম প্রমুখ।

এই অভিনব উদ্যোগের বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক খন্দকার মোখলেছুর রহমান জানান, মুলত শিক্ষার্থীদের মাঝে সততার চর্চার উদ্দেশ্যেই দোকানটি প্রশাসনের সহযোগীতায় করা হয়েছে। এটিকে সততার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও বলা যেতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা মেনে ওই বিপণি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্য কিনতে পারবে শিক্ষার্থীরা। দোকানের চারপাশের তাকে সাজানো আছে কলম, পেনসিল, খাতা, রাবারসহ বিভিন্ন রকমের শিক্ষাসামগ্রী। দোকানের একটি পণ্য অতিরিক্ত নিলে বা টাকা না দিলে দেখার কেউ নেই। তবু সবাই সততার পরীক্ষায় পাস করতে পারে কিনা তাই দেখার পালা। তিনি বলেন, প্রতিদিন স্কুল চলাকালীন সময় পর্যন্ত ওই দোকানটি খোলা থাকবে। আর কেবলমাত্র স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরাই এ দোকান থেকে পন্য ক্রয় করতে পারবে। দিন শেষে হিসেব নিকেশ করা হবে। এছাড়াও সকল শিক্ষার্থীদের ক্রয় করার পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের সহযোগীতা নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, এমন কিছুতে অংশ নিতে পেরে শিক্ষার্থীরা আনন্দিত, উজ্জীবিত।

এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, সুযোগ থাকার পরও তারা কেন আরেকটি জিনিস নিবে না? ক্যাশবাক্সে কম টাকা কেন ফেলবে না? কেউ তো আর দেখবে না। তার বক্তব্যের সারকথা বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। ‘স্যাররা আমাদের বিশ্বাস করেন তাই,’ ওই শিক্ষার্থীর সোজা উত্তর। শিক্ষার্থী তানিসা বলল, ‘আমি সততা চর্চার সুযোগ জীবনে এই প্রথমবার পেয়েছি, কেন আমি সে সুযোগ কাজে লাগাব না?’এই চর্চা শিক্ষার্থীদের ওপর সুপ্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ওই স্কুলের জীব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষিকা নাজনীন সুলতানা। তিনি বললেন, সততা স্টোরের মাধ্যমে দূর্ণীতির প্রতি ঘৃণা আর সততার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করবে নতুন প্রজন্মের মাঝে।

স/অ