বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি:
তফসিল ঘোষণা না হলেও নাটোরের বাগাতিপাড়ায় থেমে নেই সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। তবে মাঠে থাকা প্রার্থীরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের। বিএনপি-জামায়াত এখনও সরব হয়নি। তাই বিরোধী দলের প্রার্থীদের নীরবতার সুযোগে দলীয় মনোনয়ন লাভে কোমর বেঁধে প্রচার- প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা কৌশলে নিজেদের পরিচিতি ও উপস্থিতি জাহির করছেন। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে চলছে ব্যাপক শোডাউন। চলছে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও দোয়া প্রার্থনা। এছাড়া চলছে লিফলেট বিতরণও। হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি চলছে গণসংযোগ ও ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। গণসংযোগের পাশাপাশি করা হচ্ছে মিছিল ও পথসভা। এছাড়াও প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে এবার নতুন করে যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ‘ফেসবুক’। ভোটারদের মন জয় করতে প্রচারণার নানা ছবি তুলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ফেসবুক দেয়ালে দেয়া হচ্ছে।
তবে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে কমপক্ষে তিনটি ধাপ পেরোতে হবে। প্রথম ধাপে রয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের বাছাই, এরপর চূড়ান্ত মনোনয়ন এবং শেষে নির্বাচনের দিন ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হতে হবে প্রার্থীকে। অর্থাৎ একজন প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার পূর্বে মনোনয়ন পেতেই দলীয় বাছাইয়ে ভোটে অংশ নিতে হবে। অবশ্য সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমেও বাছাই সম্পন্ন হতে পারে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলায় একাধিক প্রার্থী হলে উপজেলা কমিটি বাছাই করে তিনজন প্রার্থীর তালিকা সুপারিশ করে কেন্দ্রে প্রেরণ করবেন। এরপর কেন্দ্র থেকে একজন প্রার্থীকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে। এরপর তিনিই চুড়ান্ত মনোনীত হয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবেন। সেক্ষেত্রে বাগাতিপাড়া উপজেলায় একাধিক প্রার্থী হওয়ায় তিনজন প্রার্থীকে বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠাবে উপজেলা আওয়ামীলীগ ।
দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রার্থী বাছাইয়ের নিমিত্তে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীতার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নিকট থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করেন। শুক্রবার থেকে আবেদন গ্রহন শুরু হয় এবং শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই আবেদন গ্রহনের শেষ সময় ছিল। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
উপজেলার শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হওয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে দলের যুগ্ম সম্পাদক সুকুমার মুখার্জী প্রার্থীদের আবেদনপত্র গ্রহণ করেন। তিনি জানান, সোমবার (২৮ জানুয়ারী) আওয়ামীলীগের এক সভায় এসব প্রার্থীদের মধ্যে প্রত্যেক পদে তিনজন করে প্রার্থী বাছাই করার কথা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা না গেলে ভোটের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে। সেক্ষেত্রে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটি এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি-সম্পাদকগণ ভোট প্রদান করবেন।
সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, বাগাতিপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের জন্য যেসব প্রার্থীরা আবেদন করেছেন তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান, সহ-সভাপতি ইউনুস আলী, যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহাব, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি হাসানুর রহমান বিপ্লব, ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লতিফ হল শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম গকুল।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৭ প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক জামিলুর রহমান বাবু, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান দোলন, ময়নুল হক বাদশা, আব্দুল হান্নান, হাফিজুর রহমান বাবলু, আলম সরকার, আমানুল্লাহ সরকার।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন। তারা হলেন, লুৎফুন নাহার লতা, শাহিদা বেগম মিতা, জোসনা বেগম, সাবিনা ইয়াসমিন, আসমা বেগম, মুসলিমা খাতুন, ফরিদা বেগম ও রুলিয়া বেগম।
এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যেক পদের জন্য তিন জন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করার জন্য সোমবার (২৮ জানুয়ারী) বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আওয়ামীলীগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হবে। তিনি নিজেও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন বলে জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন নিজেও একজন প্রার্থী জানিয়ে বলেন, আশা করছি আলোচনার মাধ্যমেই তিনজন করে প্রার্থী বাছাই করা যাবে। কোন কারনে তা না হলে গোপন ভোটের মাধ্যমে বাছাই করা হবে। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে বাছাইয়ে বাদ পড়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলীয় শৃংখলা অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে থেকে তাকে বহিস্কার করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
স/শা