বাগমারায় ১০ মামলার আসামী জাবের চলেন ২০ ক্যাডার বাহিনী নিয়ে!

বাগমারা প্রতিনিধি:
বাগমারায় অপ্রতিরোধ্য জাবের ও তার ২০ ক্যাডার বাহিনী এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। তিনি এখন গড ফাদারে পরিণত হয়েছেন। এলাকার বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তার ইশারায় তার ২০ ক্যাডার বাহিনী এখনও এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা এলাকায় মাদক, বিল পুকুর দখল, জাল টাকার কারবার, তুলে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদা আদায়ের মত লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকা তুলে আত্মগোপনে থাকা জাবেরকে সরবরাহ করছেন। জাবের এই টাকা দিয়ে প্রশাসন সহ কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে এলাকায় এখনও ত্রাস সৃষ্টি ও জনগনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার ভুক্তভোগি মহল সূত্রে জানা গেছে, মাত্র বছর কয়েক আগে সামান্য শুটকি ব্যবসার সূত্র ধরে জাবের কী ভাবে রাতারাতি কোটিপতি ও ভয়ংকর হয়ে উঠেন। তার রয়েছে ২০ জনের অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী। এই বাহিনী দিয়ে জাবের দিনে দিনে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেন। অন্যের পুকুর বিল বাড়িঘর দখল, জাল টাকার কারবার ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা তুলে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদা আদায় জাবের ও ক্যাডার বাহিনীর নিত্য দিনের ঘটনা। এলাকায় নিরীহ লোকজনকে জিম্মী করে একের পর এক দমন পীড়ন চালাতে গিয়ে জাবের ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাগমারা থানা ও রাজশাহীর আদালতে অন্তত ২০ টি মামলা দায়ের করেন এলাকার ভুক্তভোগি মহল।

তবে মামলা করেও জাবেরকে থামানো যায় না। আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে জাবের ও তারক্যাডার বাহিনী। এক সময় অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে ২০১২ সালের জুন মাসে জাবের আলীর বিরুদ্ধে মিছিল বের করে। সে সময় জাবের ও তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ওই মিছিলে হামলা চালায় এবং সে নিজেই তার বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসীকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এক সময়ের বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত জাবের ২০১২ সালের পর ভোল পাল্টিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ আওয়ামীলীগে যোগ দেন। সে নব্য আ’লীগার সেজে প্রশাসনের ছত্রছায়ার থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালাতে গড়ে তোলেন ২০ জনের সিন্ডিকেট।

তার এই সিন্ডিকেটের মূল নেতৃত্ব দেন বীরকয়া গ্রামের বাবুল হোসেন। বাবুল হোসেন এই সিন্ডিকেটের হোতা সেজে কয়েক বছরের মধ্যে বীরকয়া গ্রামে একটি, ভবানীগঞ্জ স্কুল পাড়ায় একটি ও রাজশাহী শহরে একটি করে মোট তিনটি পাঁচতলা বাড়ির মালিক বনে যান।

এছাড়া জাবেরের আরো ১৭ ক্যাডার এলাকায় লুটপাট চাঁদাবাজি, জালটাকার কারবার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করে তারাও রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। তারা হলেন একই ইউনিয়নের তেগাজি গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে জিয়াউর রহমান(৩৫), একই গ্রামের মৃত আফাজ আলীর ছেলে গোলাম(৩২), অহির আলীর ছেলে বাবুল হোসেন(৪৪), কালামের ছেলে হাবিবুর(৩৬), মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে জফের আলী(৫৫), মৃত আব্বাস আলীর ছেলে আফাজ উদ্দিন ওরফে পোল(৪২), মৃত ওসমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন ওরফে মোরা(৫৬), সাহার আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম(৩৩), মন্দিয়াল গ্রামের শামসুল আলমের ছেলে সহিদুল ইসলাম(৩০). একই গ্রামের বিজয় চন্দ্রের ছেলে নারায়ন চন্দ্র(৪০), মৃত মিরুর ছেলে ইনতাজ(৪৩), খয়রা গ্রামের ছইম এর ছেলে কফিল উদ্দিন(৫৫), একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে আব্দুল মালেক(৩২) হলুদঘর গ্রামের মৃত ছালাম আলীর ছেলে খলিলুর((৪২), একই গ্রামের মৃত মছিরের ছেলে জাকিরুল ইসলাম(৪৪), মৃত ছাবের আলীর ছেলে সামসুদ্দিন(৪৫) ও বীরকয়া গ্রামের মৃত সলিমুদ্দিনের ছেলে দেলশাদ আলী(৫০)সহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জন নিয়ে জাবের আলী গড়ে তুলেন দূর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী।

এই বাহিনী দিনে দুপুরে এলাকায় শুরু করে তা-ব। কেই চাঁদা দিতে আস্বীকার করলে তাকে কথিত টর্চার সেলে নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া থেকে শুরু করে এলাকায় দিনে দুপুরে মাদক ব্যবসা শুরু করে এই ক্যাডার বাহিনী। একে একে জাবেরসহ এসব ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাগমারা থানা ও রাজশাহীর আদালতে দায়ের করা হয় ১০ টি মামলা ।

বাগমারা থানার পুলিশ জানায় মামলা গুলোর মধ্যে চারটিতে জাবেরসহ তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দেয়া হয়েছে। বাকি গুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

এভাবে জাবের ও তার ক্যাডার বাহিনীর নির্যাতনে এখনও পুঙ্গত্ব জীবন যাপন করছেন বিরকয়া গ্রামের মোবারক হোসেন(৪৫), মন্দিয়াল গ্রামের ফেরসৌস আলী৯৪৪) সহ একই গ্রামের আরো ৪/৫ জন।
এছাড়া জাবের বাহিনীর নির্যাতন করে বাড়িঘর ভাংচুর ও চাঁদা আদয়ের শিকার হয়েছেন মন্দিয়াল গ্রামের আব্দুল মান্নান, একই গ্রামের রুস্তম আলী, মোজাম্মেল হক, বলদের আলী, বীরকয়া গ্রামের আনিছার, ফরহাদ আলী এবং কালিকাপুর গ্রামের বসু প্রাং ও কায়েম আলী সহ ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অন্তত শতাধিক নারী পুরুষ জাবের বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন ও চাঁদাবাজিরর শিকারে পরিণত হন।

খয়রা গ্রামের রনজিত এর কাছে জাবের সাইপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ টাকা নেয়। পরে চাকরী না হলে রনজিত ওই টাকা চাইতে গেলে তাকেও নির্যাতন করে জাবের বাহিনী।

এছাড়া হলদঘর গ্রামের দিলিপ কুমারের একটি পুকুর জাবের বাহিনী গত ছয় বছর ধরে দখল করে রেখেছে। দিলিপ পুকুরের টাকা চাইতে গেলে তার বাড়িতেই লুটপাট চালায় জাবের বাহিনী। এত কিছুর পরেই জাবের বাহিনী পার পেয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য খুঁটির জোরে।

জাবের বাহিনীর হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, জাবেরকে গ্রেফতারের পর হ্যান্ডকাপ সহ পুলিশের উপর হামলা করে তার ক্যাডার বাহিনী জাবেরকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের মামলা হওয়ার কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মামলাটি হয়নি। সে বাইরে থেকে এখনও এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি করে চলেছে। তার কারণে লোকজন আওয়ামীলীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএই সৌরভ কুমার জানান, জাবের ও তার ক্যাডার বাহিনী আমাদের কাছে এখন মোষ্ট ওয়ানটেড। তারা এলাকাছাড়া। এলাকায় আসলেই গ্রেফতার করা হবে।

বাগমাররা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, কোন ভাবেই জাবের বাহিনী পার পাবে না। তার বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি নারী নির্যাতন ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।