বাগমারায় লকডাউনের অজুহাতে সিলিন্ডার গ্যাসসহ বাড়ানো হচ্ছে জিনিসপত্রের দাম

রাশেদুল হক ফিরোজ, বাগমারা:
রাজশাহীর বাগমারায় লক ডাউনে সরকারী নির্দেশনায় বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদার কারনে বিভিন্ন সময়ে বেশী মূল্যে নানা জিনিসপত্র বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য জিনিসপত্রের মতো সিলিন্ডার জাত গ্যাসের মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশী আদায় করছেন বলে জানা গেছে।

সরকার দুই দফা মূল্য কমালেও বাগমারায় লকডাউনের অজুহাতে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ইচ্ছামত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অধিকাংশ গ্রাহকদের। তাদের অভিযোগ, পূর্বের দামের চেয়ে এলপি প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য দুই দফা কমে সাড়ে আটশ থেকে সাড়ে নয়শ টাকা নির্ধারন করা হলেও এই দামে কোথাও গ্যাস মিলছে না। উপজেলার অধিকাংশ দোকানী যমুনা বসুন্ধরা সহ বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এখনও পূর্বের মত সাড়ে নয়শ থেকে হাজার পঞ্চাশ টাকা হরে আদায় করছে। অনেক দোকানী লকডাউনের অজুহাতে এর চেয়েও বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছে বলে বিভিন্ন এলাকার গ্যাস ব্যবহারকারীদের সূত্রে জানা গেছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর সহ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন ব্রান্ডের এলপি গ্যাসের অথরাইজড (বৈধ) ডিলার রয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন। অথচ উপজেলার প্রায় শতাধিক স্থানে যত্রতত্র ভাবে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার ভরা এলপি গ্যাস।

সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারী জনসাধারন বলছেন, করোনার অজুহাত তুলে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী দোকানী পূর্বের লকডাউনের ক্ষতি পুষাতে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছে। ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ের গ্যাস বিক্রেতা হাজী আব্দুল মালেক জানান, তার দোকানে বিভিন্ন দাম ও মানের গ্যাস রয়েছে। তিনি বসুন্ধরা সাড়ে বার কেজির সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ৯৫০ টাকা এবং একই ওজনের যমুনা গ্যাস ৯০০ টাকা ও বেক্্িরমকো গ্যাস ৯৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, এসব গ্যাস তিনি সামান্য লাভে বিক্রি করে থাকেন। তবে সরকার যে ভাবে গ্যাসের দাম কমিয়েছে সে সংক্রান্ত কোন আদেশ নির্দেশ তারা এখনও পাননি। পেলে সেই মত ব্যসস্থা নিবেন বলে তিনি জানান। তবে শনিবার (৩জুলাই) ভবানীগঞ্জ বাজারে একই গ্যাসের বাড়তি মূল্য নিতে দেখা গেছে বেশ কিছু দোকানীকে। বসুন্ধরা সাড়ে বার কেজির একটি সিলিন্ডার হাজী আব্দুল মালেকের দোকানে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও একই গ্যাসের সিলিন্ডার ভবানীগঞ্জ লতিফ মার্কেটের বাশার ইলেকট্রনিক্স এ বিক্রি করতে দেখা গেছে ১০০০ টাকা দরে।

দোকানদার সাইফুল ইসলাম দুলাল জানান, এই গ্যাস তারা আরো বেশি দামে বিক্রি করতেন। এখন সরকার দাম কমানোর ফলে ১০০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে সরকার আরো দাম কমিয়ে থাকলেও এর চেয়ে কম দামে তিনি গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই্ বাজারের আরো বেশ কিছু গ্যাসের দোকানে ঘুরে একই নাম ও ওজনের গ্যাসের সিলিন্ডারের দামের মধ্যে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকার দামের ব্যবধান লক্ষ করা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন বাজারে প্রশাসনের কোনই নিয়ন্ত্রন নেই। তাই যে যার মত মূল্য আদায় করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভবানীগঞ্জ বাজার সহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকার কোথাও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াশ কর্পোরেশন (বিপিসি) নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না। সর্বত্রই বিপিসি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছে দোকানীরা।

গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাস নিয়ে দোকানীরা একটি অলিখিত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। স্থানীয়দের মতে শুধু গ্যাসই নয়, বাগমারার বিভিন্ন হাটে বাজারে এখন প্রায় প্রতিটি পন্যের দাম আনেক বেশি হারে আদায় করছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। এই বাজারে সোয়াবিন তেলের দাম লকডাউনের আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন সেই তেল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তাদের মতে, এখানে ভোক্তা অধিকার আইন থাকলেও এটা শুধু কাগজে কলমে রয়েছে। এর বিন্দুমাত্র বাস্তাবায়ন নেই। তাই যেখানে যে যার মত পারছে বেশি দামে পন্য বিক্রি করছে।

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ আহম্মেদ জানান, অচিরেই গ্যাস সহ অন্যান্য পন্যের মূল্য যাচাই বাছাই করতে বাজার মরিটরিং শুরু করা হবে। কোথাও কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

স/রি