বাগমারায় বৈরাগী পল্লীতে হামলা: মহিলাসহ আহত ২০

বাগমারা প্রতিনিধি:
বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের বাঁধের হাট এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় কিছু খাস জমিতে একটি ক্লাব ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে বৈরাগী পল্লীতে প্রতিপক্ষের হামলায় সংখ্যালঘু পরিবারের মহিলাসহ প্রায় বিশ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, বাঁধের হাট এলাকার সত্যেন্দ্র চন্দ্র দাস(৫৫), ভুলোন চন্দ্র দাস(৩৫), ভুট্রো রাম চন্দ্র দাস(৫৫), কার্তিক চন্দ্র দাস(৫০) বাবলু(৪০), মন্টু(৩৫), কার্তিক চন্দ্র দাস(৬০), গোপাল চন্দ্র দাস(৭১), সুরোবালা দাসী(৮০) । খবর পেয়ে বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বাঁধের হাট এলাকার একটি খাস জমিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যনের ভাই মোস্তাক আহমেদ ও এলাকার এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার ভাই আনিছুর রহমান ও  তাদের সহযোগি নাজিম, মাহাবুর, শুকুর আলী, আব্দুল মান্নান সহ কথিপয় ২০/২৫ জন যুবক হুলিখালি যুব ঐক্য সমাজ কল্যাণ সংঘ নামে একটি ক্লাব নির্মাণের উদ্যোগে নেয়। যুবকরা  বাঁধের ওই  এলাকায় ক্লাবের নামে একটি সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। গত বুধবার বিকেলে যুবকরা ওই জায়গায় স্থায়ীভাবে একটি ক্লাবঘর নির্মাণের উদ্যোগে নেয়।

এ সময় বাঁধ এলাকায় বসবাসকারী লোকজন ক্লাব স্থাপনে বাঁধা প্রদান করলে উভয়ের মধ্যে তীব্র বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় মোস্তাক পক্ষের লোকজন পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে স্থানীয় বৈরাগী সম্প্রদায়ের লোকজনের উপরে হামলা চালিয়ে তাদেরকে বাড়ি থেকে টেনে ছেঁচড়ে বের করে বেধড়ক মারপিট শুরু করে এবং তাদের বাড়িঘর সহ দোকানপাঠে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় আহত গুরুতর আহত অবস্থায় প্রায় ১০ জনকে   উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে ভর্তি করা হয় বাঁকিদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাঁধের হাট এলাকার ভুলোন বৈরাগী জানান, বৈরাগী সম্প্রদায়কে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ক্লাব নির্মাণের উছিলায় আমাদের বাড়িঘর ও দোকানপাঠে হামলা চালায়।

এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অবস্থা বেগতিক দেখে বিষয়টি বাগমারা থানায় অবহিত করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ওই দিন রাতে পুলিশ উভয় পক্ষকে বিষয়টি মিমাংসার জন্য থানায় বসার কথা বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করা মাত্রই মোস্তাক পক্ষ বৈরাগী সম্প্রদায়ের উপর আবারও হামলা চালালে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন থানার ওসি নাছিম আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুসহ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা বিরেন্দ্রনাথ সরকার, প্রদীপ কুমার সিংহ ও সুনীল কুমার কুন্ডুসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান দুলাল ।

এ সময় নেতৃবৃন্দরা মোস্তাক পক্ষের ঝুলিয়ে দেওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরের তালা খুলে দিয়ে বৈরাগী সম্প্রদায়কে বসবাসের সুযোগ করে দেন। এ বিষয় জানতে চাইলে থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ জানান, এটা কোন সাম্প্রদায়িক ডাঙ্গা নয়। সরকারি বাঁধের খাস জমির দখল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সুত্রপাত হলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা বিরেন্দ্রনাথ সরকার সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এটা কোন সম্প্রদায়িক বিষয় নয়। সরকারি খাস জমিতে বাসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে কথিপয় স্বার্থবাদী মহল পরিকল্পিত ভাবে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, খাস জমিতে বসবাস নিয়ে এই সংঘর্ষ ঘটেছে। যাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে এনে পূর্নবাসন করা হয়েছে। এই ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স/শ