বাগমারায় দলিল জালিয়াতি চক্রের ৪ জন আটক

বাগমারা প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের পলাশী গ্রামের আক্কাছ আলীর জমি সংঘবদ্ধ দলিল জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে ও স্থানীয় সাব রেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় দাতা সাজিয়ে অর্থের বিনিময়ে অর্ধ কোটি টাকার মূল্যের জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় এলাকার জমির মালিকরা জমি রক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ইতোপূর্বেও এধরেন ঘটনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, আক্কাস আলী সোমবার দলিল লেখক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ওরফে মডির মাধ্যমে বাগমারা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আসেন। তিনি জমিদাতা হিসাবে মা রাহেলা বেগমের (৭৫) ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি যুক্ত করেন দলিলে। রাহেলা বেওয়া তিন লাখ ৮৪ হাজার টাকায় তাঁর কাছে ৩৯ শতক জমি বিক্রি করছেন বলে দলিলে উল্লেখ করেন। তবে জমি নিবন্ধনের সময় জমির দাতা হিসাবে আক্কাছ আলী তাঁর শাশুড়ি চন্দ্রভানকে সাবরেজিস্ট্রারের সামনে হাজির করেন।
শাশুড়িকে মা সাজিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি নিবন্ধন করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলিল লেখক ও সাবরেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করে এই ধরনের জালিয়াতি করা হয় বলে জানা গেছে। ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর দলিল লেখক সমিতির নেতারা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করে পুলিশে দিয়েছে। অভিযুক্তরা জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে এই ঘটনায় অনুতপ্ত প্রকাশ করেছেন। ওই ঘটনায় দলিল লেখকসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন, দলিল লেখক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম মডি, গ্রহীতা আক্কাছ আলী, তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ও শ্বাশুড়ি ভুয়া দাতা চন্দ্রভান বেওয়া। এই ঘটনায় ভবানীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার ওবায়েদ উল্লাহর যোগসাজসে জালিয়াতির এই ঘটনা সংগঠিত হলেও মামলায় শুধু দলিল লেখককে আসামী করা হলেও সাব-রেজিস্ট্রারকে কৌশলে মামলা বিরত রাখায় স্থানীয় দলিল লেখক ও সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের পলাশী গ্রামের আক্কাছ আলী গতকাল সোমবার দলিল লেখক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ওরফে মডির মাধ্যমে বাগমারা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আসেন। তিনি জমিদাতা হিসাবে মা রাহেলা বেগমের (৭৫) ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি যুক্ত করেন দলিলে। রাহেলা বেওয়া তিন লাখ ৮৪ হাজার টাকায় তাঁর কাছে ৩৯ শতক জমি বিক্রি করছেন বলে দলিলে উল্লেখ করেন। তবে জমি নিবন্ধনের সময় জমির দাতা হিসাবে আক্কাছ আলী তাঁর শাশুড়ি চন্দ্রভানকে সাবরেজিস্ট্রারের সামনে হাজির করেন।
এসময় দাতা হিসাবে রাহেলা বেওয়ার পরিবর্তে চন্দ্রভানের টিপসহি নিয়ে দলিলটি নিবন্ধন সম্পন্ন করেন সাবরেজিস্ট্রার। ঘটনাটি জানাজানি হলে বিকেলে প্রকৃত রাহেলা বেওয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এসে অভিযোগ দেন। পরে দলিল লেখক সমিতির নেতারা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এই ঘটনার সাথে জড়িত ভূয়া দাতা চন্দ্রভান বেগম ( ৬৫), গ্রহিতা আক্কাছ আলীকে (৪৫) আটক করে। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে বাগমারা থানার পুলিশ জানায়।

ভবানীগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির অহিদুল ইসলাম বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এতে দলিল লেখকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দলিল লেখক সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাটি জানার পর রাহেলা বেওয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জমি ফেরত পাওয়া ও জালিয়াতির বিচার চান। তিনি ও তাঁর বড় ছেলে শমসের আলী অভিযোগ করেন, দলিল লেখক রফিকুল ইসলাম ও সাব রেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৫২ লাখ টাকার সম্পতি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে।
ভূয়া দাতা চন্দ্রভান বেগম স্বীকার করেন, জামাই তাঁকে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসেছেন। তবে সাবরেজিস্ট্রার তাঁর পরিচয় সর্ম্পকে কিছুই জানতে চাননি। তিনি অনুতপ্ত বলে জানান।

আক্কাছ আলী অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, তিনি লোভে পড়ে জালিয়াতি করেছেন। দলিল লেখক ও সাবরেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করে কাজটি করেছেন।
সাবরেজিস্ট্রার ওবায়েদ উল্লাহ প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন তিনি রেজিস্ট্রি করেননি। পরে রেজিস্ট্রির তথ্য প্রমাণ দেখানো হলে তিনি জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি কেন এই জালিয়াতির আশ্রয় নিলেন এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

অভিযুক্ত দলিল লেখক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ওরফে মডি জালিয়াতির বিষয় স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি না বুঝে রেজিস্ট্রি করতে সহায়তা করেছি। বিষয়টি তিনি লেখালেখি না করার অনুরোধ করেন।

বাগমারার ইউএনও শরিফ আহম্মেদ জানান, তিনি বিষয়টি সর্ম্পকে দলিল লেখক সমিতির নেতাদের মাধ্যমে জেনেছেন। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে এঘটনায় এলাকার জমির মালিকরা জমি রক্ষা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। পূর্বেও এধরেন দাতা সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রির ঘটনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। উপজেলার রায় সেনপাড়া আলহাজ আ. কাদেরর ৩৬ বিঘা জমি সংঘবদ্ধ দলিল জালিয়াতি চক্র ও স্থানীয় সাব রেজিষ্টারের সহযোগীতায় দাতা সাজিয়ে অর্থের বিনিময়ে আজাহার আলী নিজ ভাই ও সৎ মাসহ ওয়ারিশদের বাদ দিয়ে জালিয়াতি মাধ্যমে বিগত ৩ বছর আগে লেখে নেয়ার অভিযোগ হয়। পরে বিষয়টি প্রকাশ পেলে পুনরায় জমির মালিককে জমি ফিরে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া তাহেরপুরের নাছির উদ্দিন ফকিরের তাহেরপুর মৌজার ৩০ শতাংশ জমি মর্জিনা ওরফে জহুরা বেগম ও শামীমুল ইসলামের স্ত্রী ফিরোজা বেগমের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি দলিল রেজিষ্ট্রি ঘটনাও ঘটিয়েছিল।

 

স/শা