বাগমারায় একটি স্কুলে অনুমোদনহীন পদে বেতন তুলছেন প্রধান শিক্ষক

বাগমারা প্রতিনিধি:

স্কুলে শাখার কোনো অনুমোদন নাই। শাখা পদে কোনো দিন শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ অলৌকিকভাবে বিদ্যালয়ের এমপিও শিটের তালিকায় অনুমোদনহীন শাখায় নিয়োগ বিহীন একজন শিক্ষকের নামে এমপিওভূক্ত করে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে । ওই শিক্ষকের নাম আমজাদ হোসেন প্রাং, জন্ম তারিখ: ১০/০৫/১৯৭৯ ইং, ইনডেক্স নং ১০৩১৭৭৫, ব্যাংক হিসাব নং ৩৪০১৭৯২৯। বাস্তবে আমজাদ হোসেন নামে স্কুলে কোনো শিক্ষক কর্মরত না থাকলেও ওই ভুয়া শিক্ষকের ইনডেক্স ও ব্যাংক হিসাব নম্বর ব্যবহার করে ৬ বছর ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। ঘটনাটি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান প্রামানিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

এ ঘটনায় ভুয়া শিক্ষকের নামে বেতন ভাতা উত্তোলন বন্ধ করতে এবং এ পর্যন্ত সরকারী কোষাগার থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত সমুদয় টাকা উদ্ধারের দাবিতে মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি করেছেন চন্ডিপুর গ্রামের মৃত কোকাই মন্ডলের ছেলে ওয়াজেদ আলী। এছাড়া মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, রাজশাহী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বাগমারা এবং জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন, রাজশাহী বরাবরেও পৃথকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাগমারার কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান প্রামানিক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্তৃপক্ষের চোখে ধোকা দিয়ে কোনো প্রকার নিয়োগ ছাড়াই জনৈক আমজাদ হোসেন প্রাং নামে এক ব্যক্তির সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে দাখিল করেন। এ প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে স্কুলের অনুমোদনহীন শাখা পদে ওই ভূয়া শিক্ষকের নামে এমপিওভূক্ত হয়ে যায়। এরপর থেকেই ওই ভুয়া শিক্ষকের নামে আসা বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন প্রধান শিক্ষক। প্রকৃতপক্ষে কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কোনো শাখার অনুমোদন নাই এবং আমজাদ হোসেন প্রাং, জন্ম তারিখ: ১০/০৫/১৯৭৯ ইং নামে কোনো শিক্ষক কর্মরত নাই। অথচ কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কোড নং ৮৬০২২০১৩০৪ এর এমপিও শিটের তালিকায় ওই ভুয়া শিক্ষকের নামে ইনডেক্স নং ১০৩১৭৭৫ এবং ব্যাংক হিসাব নং ৩৪০১৭৯২৯ খোলা হয়েছে। উক্ত ইনডেক্স ও হিসাব নম্বরের মাধ্যমে প্রাপ্যতাবিহীন পিয়ন পদে ১৯৯৮ সালে নিয়োগকৃত (অ-এমপিওভূক্ত) আমজাদ হোসেন প্রাং, জন্ম তারিখ: ১৩/০৫/১৯৭৮ইং, শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী এর নাম ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংক লিডিটেড ভবানীগঞ্জ শাখা থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, আমার বিদ্যালয়ে কোনো শাখার অনুমোদন নাই এবং আমজাদ হোসেন প্রাং নামে কোনো শিক্ষকও কর্মরত নাই। তবে ১৯৯৮ সালে আমজাদ হোসেন প্রাং নামে একজন পিয়ন নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রাপ্যতা না থাকায় আজও তার বেতন হয়নি। এ কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমজাদ হোসেন নামে এক শিক্ষকের সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে দাখিল করে তার নামে এমপিওভূক্ত করা হয়। তবে শিক্ষকের স্কেল বেতন আসলেও তা থেকে পিয়নের স্কেলে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে কিছু টাকা অ-এমপিওভূক্ত পিয়ন আমজাদ হোসেনকে দেওয়া হয়। আর বাঁকি টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

প্রাপ্যতাবিহীন পিয়ন পদে নিয়োগকৃত আমজাদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। আর এ নিয়ে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে মর্মে ৩০০/= টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর মস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের এ ধরণের কর্মকাণ্ড কখনই গ্রহনযোগ্য নয়। এটা ক্ষমার অযোগ্য এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে চরম প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিউল ইসলাম বলেন, ভূয়া শিক্ষকের নামে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন বন্ধ করতে এবং এ পর্যন্ত ওই ভুয়া শিক্ষকের নামে যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স/শা