বাগমারায় ইউপি নির্বাচন: মর্যাদার লড়াইয়ে নৌকা-ধানের শীষ

শামীম রেজা,বাগমারা:
রাজশাহীর বাগমারায় ১৬টি ইউনিয়নের স্থগিতকৃত নির্বাচন আগামী ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণা জমে উঠেছে। শেষ সময়ে নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে চায়ের স্টল, হাট-বাজারসহ সর্বত্রই চুল চেরা বিশ্লেষণ চলছে।

 
আর মাত্র ৭ দিন বাঁকি রয়েছে নির্বাচনের। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রচার প্রচারণা ততই তুঙ্গে উঠছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে সারা দেশের ন্যায় এই প্রথম দলীয় নির্বাচন হচ্ছে এমনটি নিয়ে দলীয় প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আঞ্চলিক ও নিজস্ব কিছু ইমেজে জন প্রতি ভোট অনূকুলে ভিড়ছে।

 
কোন প্রার্থী কার চেয়ে যোগ্য কে হচ্ছেন ইউপি’র চেয়ারম্যান সর্বত্রই আলোচনার ঝড় উঠেছে গ্রাম-গঞ্জে। এমন এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীর হাল-চাল।

 
বড়বিহানালী ও গণিপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে বড়বিহানালী ইউনিয়নের আ’লীগের রেজাউল করিম ও বিএনপি’র মাহামুদুর রহমান মিলন। নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত রেজাউল করিম, ও বিএনপি’র সমর্থিত উপজেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি মরহুম রফিকুল ইসলাম রফিকের পুত্র মাহমুদুর রহমান মিলন দু’জন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে এমনটি হাওয়া বইছে সর্বত্রই।

 
গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক আ’লীগে বলিষ্ঠ নেতা খামারী রফিককে হারিয়ে নির্বাচিত হন। গত ১০ আগস্ট হার্টস্ট্রোকে মারা যাবার পর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ খালি হয়ে পড়ে। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ইউপি উপ নির্বাচনে ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলীকে হারিয়ে মাহমুদুর রহমান মিলন বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।

 
এর পর আবারো আগামী ৩১ অক্টোবর ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মিলন বাবার ত্যাগ, তিতিক্ষা ও দলীয় পরিচয় নিয়ে ধানের শীষ নিয়ে মাঠ দখলে নিয়েছেন। তিনি পিতার গুণগান গেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। একই ভাবে সরকারী দলীয় হবার সুবাধে আ’লীগ সমর্থিত রেজাউল করিম নিজের অবস্থা দৃড় করতে নৌকা প্রতীক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একই ভাবে বাসুপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচনকে ঘিরে এখন ইউনিয়ন সরগমর।

 
শেষ সময়ে দলীয় পরিচয় ও ব্যক্তি ইমেজে আ’লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মাষ্টার লুৎফর রহমান নৌকা প্রতীকে নিয়ে ভোট চেয়ে ফিরছেন। বিগত দিনে চেয়ারম্যান থাকার ফলে তার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে ১নং ওয়ার্ডের সগুনা-বালানগর ভায়া গোপালপুর হয়ে বয়ে যাওয়া দাঁড়িতে তিনি ও তার আত্মীয়দের একাধিক পুকুর খননে পানিবদ্ধতায় ওই এলাকার বেগুন, মরিজ, পানবরজসহ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্তদের কোন সুরহা না করায় ভোটারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 
এছাড়া ৩নং ওয়ার্ডে বিল-খালে অবৈধ দখল নিয়ে মাছচাষে মৎসজীবীদের সাথে বিগত দিনে একাধিকবার সংঘর্ষ মামলা হালার ঘটনায় ও স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে অন্যান্য ইউনিয়নের থেকে চকিদারী ট্র্যাক্সের নামে অতিরিক্ত চাঁদা তুলায় ভোটারধের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এতেও হাল না ছেড়ে নৌকা প্রতীকে ভোট নিতে তিনি মাঠে চুষে ফিরছেন।

 
অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেউলিয়া গ্রামের আলহাজ আব্দুল জব্বার মন্ডল বীর মুক্তি যোদ্ধা পরপর ৩ বার এক সময়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তিনি ইউনিয়নে পুরাতন লোকজনের বেশ আস্তাভাজন হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তার দু’ জামাতা আ’লীগ ও বিএনপি’র উপজেলা পর্যায়ে শীর্ষ নেতা সে দিক থেকে দুই দলের সমর্থকরা নেতার শুশুরকে সম্মান না দিয়ে পারছেন না এতে করে নির্বাচনে তার পাল্লা অনেকটা ভারি বলে ইউনিয়নের অভিজ্ঞমহল জানিয়েছেন।

 
এছাড়া বিএনপি’র প্রার্থী দলের তরুন উজ্জিবীত নেতা জিল্লুর রহমান দেউলিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান।  মীর পরিবারের সদায় হাস্যজ্জ¦ল, নম্্র ও ভদ্র ছেলে হিসেবে তার বেশ সুনাম। বিগত ৭ মে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে ভোট বন্ধ হলেও সে মাঠে জনগণের কাছে ছিল সে হিসেবে তার মাঠে অবস্থান ভালো বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোটার।

 
উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের আ’লীগের এসএম এনামুল হক, বিএনপি’র এ্যাড, মনিরুজ্জামান রঞ্জু, জাতীয় পার্টির আফছার আলী, স্বতন্ত্র হারুন অর রশীদ সহ ৪ জন প্রাথী নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।

 
এখানে মুলত লড়াই হবে বিএনপি ও আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে। বিএনপি’র প্রার্থী এ্যাড. মনিরুজ্জামান রঞ্জু একডালা গ্রামের প্রভাবশালী মন্ডল বংশের অতি পরিচিত ব্যক্তি। এছাড়া বাগমারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুখলেছুর রহমানের বড় ভাই হওয়াতে দলীয় ইমেজে ভোট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের ধানের শীষে ভোট ধরে রাখতে চেষ্টারত রয়েছেন।

 
আ’লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী হারুনুর রশিদ দলের ভোট কেটে নিলে নিশ্চিত বিজয়ী রঞ্জু। অপর দিকে আ’লীগের এসএম এনামুল হক চকমহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক আমীর উদ্দিনের ছেলে। পিতার নাম জসের সাথে দলীয় হিসেবে পাশ্ববর্তি উপজেলা মোহনপুরের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার আর্শিবাদে মাঠে চুষে ফিরছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। সেই দিক দিয়ে দলের লোক  দলে ভিড়ে রাখতে পারলে সেই হবে চেয়ারম্যান এমনটি ভোটারদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 
একই ভাবে উপজেলার আরো ১৩টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে অধিকাংশেই মূলত আ’লীগের নৌকা ও বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে বলে পর্যায়ক্রমে জানা গেছে।

স/শ