বাগমারা নরদাশ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠের বেহাল অবস্থা

এইচ,এম, মোবারক (হাট গাঙ্গোপাড়া):

শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা মানুষের মনকে প্রফুল্ল রাখে। সেই সাথে শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় শারিরিক এ কসরত। তাছাড়া বর্তমান সরকার শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ও অনেক বেশি সচেতন। ফলে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে খেলাধুলার নানা আয়োজন করতে দেখা যায় ক্রীড়া প্রেমীদের।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি ফুটবল মাঠের নাম নরদাশ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ। এই মাঠে বিগত দিন গুলিতে স্থানীয় ভাবে উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হতো।

জানা গেছে, এই মাঠে খেলার জন্যে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ফুটবল খেলোয়ার এবং খেলা দেখার জন্য প্রধান অতিথি হিসাবে এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও বেশ কয়েক বার উপস্থিত ছিলেন। আরো জানা গেছে বনবন্ধু মো: জাহেদুর রহমান ইকবাল ও এক সময় হেলিকপ্টার নিয়ে এই মাঠে এসে নেমেছিলেন খেলা উপভোগ করার জন্য। সে সময় হাজারো দর্শক তাকে হাততালি দিয়ে অভিন্দন জানিয়েছিলেন।

কিন্ত সেই মাঠের আজ এমন বেহাল দশা, যে মাঠের মধ্যে দিয়ে কোন মানুষ পায়ে হেঁটে যেতে পারছেনা। সামান্য বৃষ্টিতেই এই মাঠটি এখন ডোবায় পরিনত হয়ে যায়।

মাঠের এমন অবস্থার পরেও জাতীয় পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসার শীতকালীন ও গ্রীস্ম কালীন ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় বাগমারা উপজেলার ” ঘ ” অঞ্চলের খেলাধুলার ভেন্যু হিসাবে এই নরদাশ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই খেলাধুলার মধ্যে , ফুটবল,ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দৌড়, হাইজাম্প, লং জাম্প, গোলক, চাকতী নিক্ষেপ সহ বিভিন্ন খেলায় অংশ গ্রহন করে ”ঘ” অঞ্চলের প্রায় ৩২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাঠে ঘাস না থাকা এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকার কারনে অনেক খেলোয়াড় আহত হবার ঘটনার কথাও জানা গেছে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে।

এ বিষয়ে কথা হলে নরদাশ বয়েজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রীড়া সম্পাদক, পানিয়া নরদাশ ডিগ্রী কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আ: সালাম বলেন, এই মাঠে খেলার পরিবেশ আর একেবারেই নেই। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার জায়গা গুলো নষ্ট হবার কারনে যুব সমাজ আজ মাদকের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। নরদাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ এলাকার শ্রেষ্ঠ ফুটবল মাঠ হিসাবে পরিচিতি ছিল। এই শ্রেষ্ঠত্ত্ব আজ শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে।

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের অনীহা আর উদাসীনতাই এর প্রধান কারন। তাছাড়া এই মাঠে দীর্ঘ দিন যাবৎ গরুর হাট বসে, এই কারনে মাঠে ঘাস জন্মেনা । অল্প বৃষ্টি হলেই মাঠে অসম্ভব রকম কাদা হয়। পানি নিস্কাশনের তেমন সুব্যবস্থা না থাকার করনে মাঠের এই অবস্থা।

তিনি আরো বলেন, এই মাঠের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সুদুর প্রসারী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন, প্রথমে মাঠ থেকে গরুর হাটকে অন্য জায়গায় সরানো দরকার।

বর্তমান সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করে আ: সালাম আর ও বলেন, এলাকার ক্রীড়ামোদী সাধারন মানুষের প্রানের দাবি এই মাঠটিকে সংস্কার করে একটি মিনি ষ্টেডিয়ামে পরিনত করা হোক।

এই মাঠের চারপাশ ঘেঁসে অবস্থিত একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কলেজ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, শিশু একাডেমি, কিন্ডারগার্ডেন, ব্যাংক , এনজিও সহ বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা রীতিমত খেলা ধুলা ও বিনোদন হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধানগনও এই মাঠটিকে একটি মিনি ষ্টেডিয়াম ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে বাগমারা উপজেলার এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মাঠের দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় মাঠের এই অবস্থা হয়েছে। আমি নিজের উদ্যোগে কিছু কাজ করেছি পুরো সংস্কার কাজের জন্য চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মাঠের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্যে স্থানীয় সকলের সহোযোগীতা প্রয়োজন। তবেই এই মাঠটি পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।

স/অ